বিডিটাইম ডেস্ক
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের অস্থির পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তারা কেবল মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই এসব ব্যক্তিকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছিল। আইএসপিআরের ভাষ্য অনুযায়ী, আইনবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলে অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থী এক–দুই দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন। তবে পাঁচজনকে তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অভ্যুত্থানের সময় সরকারের পতনের পর কুচক্রী মহলের তৎপরতায় দেশে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি ঘটে। হামলা, অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতি এবং নানাবিধ বিশৃঙ্খলা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়।
এই অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব সেনানিবাসে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিচারক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও তাঁদের পরিবারবর্গ আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, আকস্মিক এ পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ের চেয়ে তাঁদের জীবন রক্ষা করাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মোট ৬২৬ জন ব্যক্তি বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ছিলেন ২৪ জন রাজনৈতিক নেতা, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য, ১২ জন অন্যান্য শ্রেণিপেশার মানুষ এবং ৫১ জন পরিবারের সদস্য (স্ত্রী ও সন্তানসহ)।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট আইএসপিআর একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় এবং ১৯৩ ব্যক্তির একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এতে বলা হয়, সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া এসব মানুষকে মানবিক বিবেচনায় সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল এবং এটি ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়।
তবে সেনাবাহিনীর দাবি, সম্প্রতি কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরির অপপ্রয়াসও চলছে।
এ প্রেক্ষাপটে আজকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ৬২৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকাও সংযুক্ত করেছে আইএসপিআর।
বিজ্ঞপ্তির শেষে সবাইকে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও জাতির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।