বিডিটাইম ডেস্ক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নিজস্ব আর্থিক ও তহবিল পরিচালনার নীতিমালা ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটি জানিয়েছে, এনসিপিকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার জন্য একটি ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেল, মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি রসিদের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা যাবে।
বুধবার (৪জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সেখানে দলের যুগ্ম সদস্যসচিব ও কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ দলের আর্থিক নীতিমালার সারাংশ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “কালো টাকা, অজানা উৎস, বিদেশি সরকার বা অপরাধসংশ্লিষ্ট অর্থ—এই সব ধরনের অর্থ একেবারেই নিষিদ্ধ। আমরা চাই স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার নিভা, এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি—এসবের মূলে অর্থ। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সেই অসুস্থ চর্চার বাইরে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক, স্বচ্ছ আর গণভিত্তিক একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। ট্র্যাডিশনাল গণচাঁদা অব্যাহত থাকবে, সেই সঙ্গে ডিজিটাল ফান্ডিংয়ের মাধ্যমেও দেশে ও বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে অনুদান আসবে।”
নাহিদ আরও বলেন, “যাঁরা এনসিপিকে সাহায্য করতে চান, তাঁদের অনুরোধ করব—দলের বাইরে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা না দিয়ে যেন নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট বা রসিদের মাধ্যমে অনুদান দেন। কেউ যদি দলের নাম ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেন, তাহলে আমাদের দপ্তর ও শৃঙ্খলা কমিটিকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানান, দলের ওয়েবসাইট ([donate.ncpbd.org](https://donate.ncpbd.org))–এর মাধ্যমে ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনুদান দেওয়া যাবে। তিনি বলেন, “সদস্যদের এককালীন পাঁচ হাজার টাকা ও মাসিক চাঁদা, সদস্য ফরম বিক্রি ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানের মাধ্যমে আমাদের অস্থায়ী কার্যালয় ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার সময় পূর্ণাঙ্গ অডিট প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং প্রতিবছর নিরীক্ষিত হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, দলের আর্থিক কার্যক্রম তিন মাস, ছয় মাস ও বার্ষিক ভিত্তিতে নিরীক্ষিত হবে।
কোষাধ্যক্ষ সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, অনলাইনে অনুদানের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় রসিদ, ইউনিক আইডি এবং অনলাইন এন্ট্রি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাঁচ হাজার টাকার বেশি অনুদানে দাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে, তবে দলীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে।
তিনি জানান, ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডে রিয়েল-টাইমে দেখা যাবে কোন জেলা থেকে কত টাকা আসছে এবং মোট অনুদানের পরিমাণ। এ ছাড়া ১০০ টাকা মূল্যের সদস্য ফরম বিক্রির মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে। ঈদুল আজহায় আরও ৫০ হাজার ফরম বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।
এনসিপির নেতারা মনে করেন, রাজনৈতিক অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ। তারা আশাবাদী, দেশের সচেতন নাগরিকরা তাদের এই গণতান্ত্রিক উদ্যোগে পাশে থাকবেন।