বিডিটাইম ডেস্ক
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট মাসে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি—বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের কারণে ব্যবসায়ী সমাজ এখন আতঙ্কে আছে।
বুধবার (২১মে) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তাঁরা।
সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখতে হলে সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার দাবি জানান। এছাড়া রাতের বেলায় পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তায় করিডরভিত্তিক মোবাইল টিম সক্রিয় করার আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “অনিরাপদ পরিবেশ, প্রতারণামূলক অনলাইন কার্যক্রম, পণ্য পরিবহণ ঝুঁকি, জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির কারণে উদ্যোক্তারা ব্যবসা ও বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অথচ সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আনতে চায়, কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এতে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “দাবি আদায় গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ করে জনগণের জীবনযাত্রা ও ব্যবসা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুস সালাম। তিনি বলেন, “নিয়মিত কর-ভ্যাট দিয়েও ব্যবসায়ীরা এখন আতঙ্কে ব্যবসা চালাচ্ছেন।”
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা জানান, স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহনে দালাল চক্রের কারণে খরচ বাড়ছে। এছাড়া মৌলভীবাজার এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় বাবুবাজার ব্রিজে যানজট তৈরি হচ্ছে। তিনি পুরান ঢাকায় সন্ধ্যায় পুলিশি টহল বাড়ানোর আহ্বান জানান।
চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল হাসেম বলেন, “রাতে চিনির ট্রাক ছিনতাই হয়। ছিনতাইয়ের ভয়ে আমরা রিকশায় চড়তেও ভয় পাই। এই আতঙ্ক থেকে মুক্তি চাই।”
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, “এলাকার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। পুলিশের সামনেই ছিনতাইকারীরা ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু কাউকে ধরা হয় না।”
ডাল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নেসার উদ্দিন জানান, “কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে শুধু জনজীবন নয়, ব্যবসায়ও ক্ষতির মুখে পড়ছে।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি সৈয়দ মো. বশির উদ্দিন, মনিহারি বণিক সমিতির সহসভাপতি হাজি ফয়েজউদ্দিন, ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, চেম্বারের পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী এবং মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহায়মেনুল ইসলাম প্রমুখ।