বিডিটাইম ডেস্ক,
সম্প্রতি ইরানের ভূখণ্ডজুড়ে একযোগে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই সমন্বিত আক্রমণে প্রধানত দেশটির সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
হামলার মাত্রা ও গভীরতা থেকে বোঝা যায়, এটি ছিল ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনার একটি অংশ, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও পরমাণু কর্মসূচিতে স্থায়ী আঘাত হানা। এতে নিহত হন বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা।
নিহত সামরিক কর্মকর্তা:
হোসেইন সালামি – ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর চিফ-অফ-স্টাফ জেনারেল গোলামআলি রাশিদ – IRGC-এর অন্যতম শীর্ষ জেনারেল, পরমাণু বিজ্ঞানীড. ফারিদুন আব্বাসি – পরমাণু বিজ্ঞানী ও ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (AEOI)-এর সাবেক প্রধান, ড. মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি – বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, ড. আব্দুলহামিদ মিনুচেহর – খ্যাতনামা পারমাণবিক গবেষক।
তেহরানে আঘাতপ্রাপ্ত এলাকাসমূহ:
ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বোমাবর্ষণ চালানো হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
কেইতারিয়ে, নিয়াভারান, চিতগার, মেহরাবাদ, নারমাক, সাদাত আবাদ, আন্দারজগু, সত্তারখান, শহরক-এ মহাল্লাতি, শহরক-এ চামরান, কামরানিয়ে, ফারাহজাদি, ওজগোল, মারজদারান, শামখানির ব্যক্তিগত বাসভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর।
অন্যান্য প্রধান লক্ষ্যবস্তু:
নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা – একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে। এতে রয়েছে, আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর, পারচিন সামরিক কমপ্লেক্স, খন্দাব পারমাণবিক চুল্লি
আঞ্চলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা:
ইরানের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে হামলার আওতা বিস্তৃত ছিল:
কারমানশাহ, ইলাম, কোম, হামেদান, খোররামাবাদ, পিরানশাহর, তাবরিজ, কাসর-এ শিরিন।
ইসরায়েল বলেছে এটি বিশাল হুমকি রোধে পূর্ব-প্রত্যক্ষ কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল ।
এদিকে ইরান “harsh punishment” দিয়ে জবাব দেবার হুমকি দিয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি লিপ্ত নয়; তবে ইসরায়েলীয় এ্যাকশনকে একতরফা বলে বর্ণনা করছে, এবং এলাকায় নিজেদের নিরাপত্তা বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ।
ইরানের কমপক্ষে ১০ জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে এই আগ্রাসনের জবাব দেওয়া ইরানের আইনগত ও বৈধ অধিকার। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসলামি জাতিকে রক্ষায় সমস্ত শক্তি ও উপায় ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।”
আনাদোলু এজেন্সির বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা আগেই জানতেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । তবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী কোনোভাবেই জড়িত নয়।
এই হামলা ইরানের অভ্যন্তরে সামরিক এবং পরমাণু কাঠামোর ওপর একটি মারাত্মক ধাক্কা। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই হামলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বার্তা বহন করে— বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঘিরে। এখন পর্যন্ত ইরান সরকার থেকে সম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়া না আসলেও, পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
সতর্কতা এবং অস্থিরতা এখন পুরো অঞ্চলজুড়ে।