ছবি বিডিটাইম :
বিডিটাইম ডেস্ক :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ২১.৯৯ শতাংশ। আর মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয়নি ৭.৬৬%। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন এবং নির্বাচন মূল্যায়ন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
এ তথ্যে দেখা যায় , ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ৫টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয় । এতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয় ৪৭০ জন । এরমধ্যে স্নাতকোত্তর ১০৩ জন (২১.৯১%), স্নাতক ১৬৫ জন(৩৫.১১%), এইচএসসি ৮৩জন( ১৭.৬৬%) এসএসসি ৫১জন (১০.৯১%) । প্রার্থীদের মধ্যে এসএসসি’র নীচে রয়েছেন ৬৭ জন (১৪.২৫%) । মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম না করা প্রার্থীর মধ্যে স্বশিক্ষিত রয়েছে ৩৬ জন (৭.৬৬%)।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে বিজয়ীদের তুলনা করলে দেখা যায় যে, উচ্চ শিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) ৫৬.১৯% প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি করেছিলেন; নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার ৫৭.০২%। অপরদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম না করা ৮.৫৪% প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বি করেছিলেন; নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার ৭.৬৬%।
মামলা সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায় , নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে ১১৪ জনের (২৪.২৬%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ১৮২ জনের (৩৮.৭২%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৭৫ জনের (১৫.৯৬%) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে। ৩০২ ধারার মামলার ক্ষেত্রে ২৫ জনের (৫.৩২%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৩৬ জনের (৭.৬৬%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৪ জনের (০.৮৫%) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় , অধিকাকাংশ প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে অতীতে মামলা বেশি হলে বর্তমানে মামলা কম।
শীর্ষ আয়কারী চেয়ারম্যান
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মোঃ মিরাজুল ইসলাম আয় করেন ২২কোটি ৯৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩২৪টাকা , সুনামগঞ্জ শান্তিগঞ্জ উপজেলা সাদাত মান্নান আয় করেন ১৯ কোটি ৮২ লক্ষ ৪২ হাজার ২৪১ টাকা, ফেনী ছাগলনাইয়ার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মজুমদার ৭কোটি ৯৮লক্ষ ৭ি৫ হাজার ৬৭৮ টাকা , পটিয়ার মোঃ দিদারুল আলম৫ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮ হাজার ৫শ টাকা , নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলার মোঃ শাহেদ শাহরিয়ার ৪কোটি ৬৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ২৫৭ টাকা , মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলা মোঃ আবদুর রহিম খান ৪কোটি ৫৪ লক্ষ ২ হাজার ৭৭ টাকা , ফেনী সদররে শুসেন চন্দ্র শীল ৪কোটি ৪৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ২২১ টাকা , ঢাকার দোহার উপজেলার মোঃ আলমগীর হোসেন ৪কোটি ৩৭ লক্ষ ৮২হাজার ১২২টাকা , জাজিরা উপজেলা মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজী ৪কোটি ২১লক্ষ ৩২ হাজার ৪২৭ টাকা , কুষ্টিয়া সদরের মোঃ আতাউর রহমান ৩কোটি ১৩লক্ষ ৮ হাজার ৩৫৪ টাকা আয় করেন ।
বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে শীর্ষ দশজন
বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে শীর্ষ ১০ সম্পদশালীর নামও প্রকাশ করেছে সুজন। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলাম। তার সম্পদের পরিমাণ ১৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি। এরপরে যথাক্রমে রয়েছেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম (৮১ কোটি ৯৬ লাখ), কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চেয়ারম্যান রেহানা বেগম (৭৩ কোটি ৩৩ লাখ), হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান এস এফ এ এম শাহজাহান (৪২ কোটি ৫৩ লাখ), চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল হক (৩৭ কোটি ৭০ লাখ), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মজুমদার (৩৪ কোটি ৮২ লাখ), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস ফিরোজ (৩৩ কোটি ১৬ লাখ), ঝালকাঠির সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান (২৮ কোটি ৪৪ লাখ)।
দিলীপ কুমার সরকার আরও বলেন, প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র বলা যাবে না। কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের। আবার উল্লিখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য নয়, এটি অর্জনকালীন মূল্য।
সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ী প্রার্থীদের দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে বলা হয়, ৪৭০ জন বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ১৫৭ জন (৩৩.৪৪ শতাংশ) ঋণ গ্রহীতা। এর মধ্যে কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন ৫৭ জন চেয়ারম্যান (৩৬.৩১ শতাংশ)। ঋণ গ্রহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি। শীর্ষ দশজন ঋণ গ্রহীতাদের চেয়ারম্যান হলেন মোঃ আনিচুর রহমান ,মোঃ মিজানুর রহমান (মাসুম),আনোয়ারুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল গাফ্ফার এস, এম, আবুল হোসেন, শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, জিয়াউল করিম খান (সাজু) এস এফ এ এম শাহজাহান শাহীনুল আলম ছানা, মোঃ দিদারুল আলম
সংবাদ সম্মেলনে সুজন বলেন, দেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণের কোনো বিকল্প নেই । সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আপনারাও জানেন আমরাও জানি নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যবসায়ীর মূল সংখ্যাটা আরও বেশি। ব্যবসায়ী হতে পারে তাতে সমস্যা নেই। তবে এখানে টাকার খেলা থাকলে সমস্যা। যদি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনে ভোট কিনে।
ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যা দেখানো হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে, প্রশ্ন আছে? তাও সন্তোষজনক না। ৫০ শতাংশ পার হয়নি।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যা বলা হয়েছে তা ছিল কি না বলে সংশয় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করছে। এটা একই সুতোয় গাঁথা। মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা। জনগণের আস্থাহীনতা নির্বাচন কমিশনের ওপর।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কৌশলগত দিক ছিল আওয়ামী লীগের। সেখানে তারা কিছুটা হলেও সাকসেসফুল।
বিরোধীদলের স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, নির্দলীয় হিসেবে ব্যক্তি হিসেবে এসে তারা নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করে নিতে পারতেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন।