কুবি প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ইসলামের নির্দেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে খিচুড়ি ভোজকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল দেখা দিয়েছে। ভোজের অর্থায়নকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে তারিকুলকে ইসলামকে কুবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ভারতীয়র আগ্রাসন বিরোধী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও খিচুড়ি ভোজের আয়োজন করা হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। এই আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বায়ক তারিকুল ইসলাম এক কাউন্সিলর থেকে নিয়ে অর্থায়ন করে বলে জানান আয়োজক ও কুবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জান্নাতুল ইভা। এই বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে সকল ধরনের অনুষ্ঠান না করার নির্দেশ দেন। পরে প্রক্টরের সাথে কথা বলে খিচুড়ি ভোজের আয়োজনটি অব্যাহত রাখেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত সাড়ে ৭টায় মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান ভোজে আসলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। এসময় জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাকিবের নেতৃত্বে পুলিকে সুপারকে ঢুকানোর জন্য চেষ্টা করলে হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোলের সময় মোহাম্মদ সাকিব হুসাইনের নেতৃত্বে ১নং সংগঠক বিল্লাল হোসেন দৈনিক কালবেলার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আবু শামকে ধাক্কা দেন।
মানবন্ধনে অর্থনীতি ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান বলেন, ১১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু আমরা সেটা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। আমরা এসব প্রতিষ্ঠিত করা বাদ দিয়ে খিচুড়ি ভোজের আয়োজন করি। আমাদের যা করা দরকার তা না করে অন্য কাজ করতেছি।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ভারতীয় প্রোপাগান্ডা বিরুদ্ধে ন্যারেটিভ দাড় করাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন সেসময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কথিত সমন্বয়ক’রা ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী খিচুড়ি ভোজ আয়োজন করা হয়েছে। দুহাজার জনের ফ্রি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে সমন্বয়কের বিশাল অঙ্কের টাকা প্রয়োজন।এই টাকার উৎস কি? সমন্বায়ক তরিকুল দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার কাউন্সিল দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছে। তাদের এই ইনভেস্টমেন্ট করার কি? আমরা কি ধরে নিব এই ইনভেস্টমেন্ট কারণ সমন্বয়কের মাধ্যমে টেন্ডার বাণিজ্য করা।
মানবন্ধনে গণিত ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হান্নান রাহিম বলেন‚ দেশের এই পরিস্থিতিতে যেখানে আজকেও একজন ভাই মারা গেছেন, অনেক আহতরা বিছানায় কাতরাচ্ছেন, ভারতের যে প্রোপাগান্ডা চলমান সেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে খিচুড়ি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে এটি অবশ্যই বর্জনীয়। খিচুড়ি ভোজ দিয়ে কী ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী কাজ করা যায়? আপনারা বরং সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কিংবা সভার মাধ্যমে এগুলো করতে পারতেন। পাঁচ আগস্টের পর থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের যে ভূমিকা রয়েছে তা অস্বীকার করার মতো নয়। এখন কেন তাঁরা সামনে আসছে না? আসলে তারা এমন কিছু বলতে চায় যেগুলো সমন্বয়কদের বিপরীতে যাবে। এ কারণে তারা আমাদের মেয়েদের দমিয়ে রাখছে। যার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে ছাত্রলীগের যে একটি লিস্ট হওয়ার কথা চার মাস পরও সেটি করতে সক্ষম হয়নি। আমাদের প্রশাসনে যে স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে তাদের লিস্ট নেই। কারো নামে মামলা হয়নি। এই খিচুড়ি ভোজের টাকা নিয়েও রয়েছে অসামঞ্জস্যতা। সমন্বায়ক তারিকুল দেড় লাখ টাকা কেন দিলো, তার উদ্দেশ্য কী? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করার জন্যে আমরা সমন্বায়ক তারিকুলকে কুবিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। সে এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের সমন্বয়কদের বলে দিতে চাই, শুধরে যান, আপনাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য করতে দিবো না।
টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাকিব হুসাইন বলেন, একটা জিনিস যখন ট্রানজেকশন হয়, ট্রানজেকশন হওয়ার পরবর্তীতে স্বচ্ছতা – অস্বচ্ছতার বিষয় আসে। ট্রানজেকশন এখনো সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হয়নি। আমাদের কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার পরে যদি সঠিকভাবে হিসাব না দিতে পারি তাহলে মানববন্ধন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও খিচুড়ি ভোজের আয়োজন কেন্দ্র ঘোষিত কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত প্লাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যারা আছে দুই পাক্ষিক প্রেক্ষিতে।