Top 5 This Week

কুবিতে ১ কোটি টাকার বিল থেকে ৬০ লাখ টাকাই আত্মসাতের চেষ্টা

কুবি প্রতিনিধি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্পোর্টস গ্যালারি নির্মাণ ও উপাচার্যের বাংলো মেরামতে খরচ হয় ৪৮ লাখ ২৬ হাজার তিনশো এক টাকা। কিন্তু সেই বিল ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা দেখিয়েছে কুবির প্রকৌশল দপ্তর।

গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দূর্নীতির চিত্র সামনে আসছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে এসেছে অর্থ লোপাটের এমন ভয়াবহ চিত্র।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মদদে মাত্র দুটি কাজ থেকেই প্রায় ৫৬% টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন কুবির প্রধান  প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম।

শহীদুলের দাবি উপাচার্য মঈন যেভাবে বিল করতে বলেছেন তিনি সেভাবে বিল প্রস্তুত করেছেন। এখানে তার করার কিছু ছিলো না।
অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে টাকা নিতো প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম। সেই টাকা থেকে একটা নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা চলে যেতো উপাচার্যের কাছে। এখন উপাচার্য চলে যাওয়ার কারণে উপাচার্যের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড়দের জন্য নির্মিত স্পোর্টস গ্যালারী ও বাস্কেটবল গ্রাউন্ড কাজ পান ড্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটা কোম্পানি। যার টেন্ডার আইডি নং ৯৩৭১৪৯। এই কাজের কার্যাদেশ মূল্য ধরা হয়েছিল চুরাশি লক্ষ একানব্বই হাজর তেইশ টাকা। অন্যদিকে উপাচার্যের বাংলো সংস্কারের কাজ পান ওরিয়েন্টাল নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার টেন্ডার আইডি নং ৯৫০৭১৮ এর কার্যাদেশ মূল্য ছিল তেইশ লক্ষ চার হাজার একশত ষাট টাকা।

তবে সরকারের পতনের ফলে উপাচার্য অধ্যাপক ড এএফএম আবদুল মঈন পদত্যাগ করলে উল্টে যায় সবকিছু। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকার জন্য আবেদন করলে আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিল আসে উনচল্লিশ লক্ষ আটাত্তর হাজার সাতশত উনত্রিশ টাকা ও আট লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত বাহাত্তর  টাকা। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী সবুজ বড়ুয়া ও মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের সাক্ষরিত একটি বিলের কপিতে দেখা যায় এই বিল যথাক্রমে তিরাশি লক্ষ চৌষট্টি হাজার সাতশত বাহাত্তর টাকা ও তেইশ লক্ষ চার হাজার একশত ষাট টাকা।

প্রকৌশল দপ্তরের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বিল দপ্তরের কেউ করে নাই। প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নিজে টাইপ করে জোর করে অন্য প্রকৌশলীদের  সাক্ষর করান।  ওই সময় তিনি বলেন, উপাচার্য স্যার সবকিছুর জিম্মাদার আপনাদের এত চিন্তা কিসের? আপনারা স্বাক্ষর করেন ওনি বিল আটকে রাখবে কাজ শেষ হলে বিল দিবেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, কাজ চলাকালীন অনেক বার আমাদেরকে বাংলোতে ডেকে নিয়ে আজেবাজে বকতো উপাচার্য স্যার। এমনকি উপাচার্য স্যার ও শহীদুল স্যার ঢাকায় থাকা অবস্থায় আমাদের অপরিচিত নাম্বার থেকে নানা রকম হুমকি দেওয়া হতো। ওই সময় নিজের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে কিছু বলার সুযোগ ছিল না। টাকার বিষয়ে শহিদুল ইসলাম যা বলে উপাচার্য স্যার ও সেই কথায় বলেন।

অর্থ দপ্তরের সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশল দপ্তর বিলের টাকা নিতে দুইবার বিলের কপি জমা দেন। কিন্তু বিলের মধ্যে গরমিল থাকার কারণে অর্থ দপ্তর বিলের কপি রিসিভ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।  অর্থ দপ্তর সরেজমিনের বিল এবং কাজের তদারকি বিষয়ে জানতে প্রকৌশল দপ্তরে চিঠি দিলে তারা উল্লেখিত বিল উপস্থাপন করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতন হলে তড়িঘড়ি করে করে ৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনের কথা (ব্যাকডেইট দিয়ে) গত ৭ আগস্ট আরেকটি বিল উত্থাপন করেন প্রকৌশলী অধিদপ্তর। এই বিল উত্থাপন করার আগও দুইবার পরিবর্তন হয় এই বিল। গত ১৪ জুলাই  টাকা চেয়ে চিঠি দেয় প্রকৌশল দপ্তর। ইস্যু করা চিঠিতে বিল উপস্থাপন করেন আটান্ন লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা ও পনেরো লক্ষ উনসত্তর হাজার টাকা । সেই চিঠি নিয়ে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ৭ আগস্ট পুনরায় বিলের কপি দেয় প্রকৌশল দপ্তর। সেখানে বিলের পরিমাণ উল্ল্যেখ করা হয় উনচল্লিশ লক্ষ আটাত্তর হাজার সাতশত উনত্রিশ টাকা ও আট লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত বাহাত্তর  টাকা। তবে সকল বিলের কপিতে ৩০জুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এবিষয়ে ড্রিমের ঠিকাদার মোস্তাক বলেন, আমরা কাজ শেষ করেছি। কিন্তু তারা টাকা দিচ্ছে না। বিলের জন্য চিঠি দিলেও নানান কারনে বিল আটকে দিচ্ছে। প্রকৌশলীর আব্দুল লতিফ ও মুফিজুল ইসলাম আমার ইঞ্চিনিয়ার ফয়সালের টাকা দাবি করছে।
তবে টাকার বিষয়ে ড্রিমের ম্যানেজার ফয়সাল বলেন, আমার কাছে কেউ কোন টাকা চাইনি, মোস্তাক ভাইয়ের কাছে চাইছে কিনা জানি না।
পরে ঠিকাদার মোস্তফার কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে আমার ইঞ্চিনিয়ার বলছিল।

টাকা দাবির বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল লতিফ বলেন, মোস্তক আমার কাছে এসে বলে ভিসি স্যার, পিডি স্যার(শহীদুল ইসলাম) মেনে নিয়েছে। আপনার বিলে সয় করতে সমস্যা কোথায়?  কত টাকা লাগবে আপনার? তখন আমি বলি চল্লিশ লক্ষ টাকার কাজে চুরাশি লক্ষ টাকার বিল করা কাগজে আমি সয় করি না। যদি তারা টাকা দিয়ে দেয় তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমি তাদের কাছে কোন ধরনের টাকা চাইনি। বরং আমি সরেজমিনে যত টাকার কাজ হয়েছে তত টাকার রিপোর্ট করেছি। যারা নিয়মিত ঠিকাদার থেকে টাকা খাই তারা আমার নামে অপ্রচার করতেছে।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি সকল কাজ অন্য প্রকৌশলীদের ভাগ করে দিয়েছি। আমার চেয়ে তারা ভালো বলতে পারবে। সরকার পতনের পর কেন এত বড় বিল এতকম হয়ে গেল জানতে চাইলে তিনি আমতা আমতা করে বলেন, ওটা বিল ছিল না ড্রাফট ছিল। বিল তিনবার কেন পরিবর্তন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন সেটা আমার জানা নাই। বিলে ব্যাকডেইট দিয়ে কেন স্বাক্ষর করলেন সেটা জানতে চাইলে প্রথমে স্বীকার করে বলেন জুন ক্লোজিং এর বিষয় ছিল, এছাড়াও এই ধরনের কাজগুলোতে এই রকম হয় । সেজন্য আমরা হিসাব টা করে ফেলছি, পরে অস্বীকার করে বলেন এটা জুনের কাজ জুনেই শেষ করা হয়েছে কোন ব্যাকডেইট না।

প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না।  ভিসি স্যার আমাকে যে রকম নির্দেশনা দিয়েছি সেই রকম করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish