বিডিটাইম ডেস্ক
ঢাকার গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় দোকান বরাদ্দ, ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপি নেতা কামরুল আহসান (সাধন) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামরুল আহসান ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং স্থানীয় ‘রবিন-ডালিম-মাহবুব’ গ্রুপের মাহবুবের আত্মীয়। প্রতিপক্ষ ‘মেহেদী গ্রুপ’-এর অনুসারীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার কয়েক দিন আগেও তাঁকে গুলি করার চেষ্টা হয়েছিল।
রোববার রাত ১০টা ৬ মিনিটে গুলশান লেক পাড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে বসা অবস্থায় দুই যুবক এসে খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে। পরে হামলাকারীরা দৌড়ে লিংক রোডের দিকে পালিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, আরও দুই যুবক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, যারা হামলার আগে একটি গলিতে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত দুই হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। হত্যাকাণ্ডটি হতে পারে পূর্বের একটি খুনের প্রতিশোধ হিসেবে। গত মার্চে গুলশানে খুন হওয়া টেলি সুমন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন মেহেদী গ্রুপের লোক। তাঁকে খুন করেছিল রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপ। সুমনের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই কামরুলকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কামরুল আহসান দীর্ঘদিন ধরে বাড্ডা এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি একটি দোকান বরাদ্দ পান গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে। পাশাপাশি আবাসন ব্যবসায়ও যুক্ত হন। তাঁর স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বলেন, তিনি কোনো বিরোধের কথা জানাননি। ঘটনার কিছু আগে তিনি বাসায় এসেছিলেন, পরে ফোন পেয়ে বের হয়ে যান এবং এর কিছুক্ষণ পরেই গুলির খবর আসে।
বাড্ডা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে অন্তত তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ—জিসান গ্রুপ, মেহেদী গ্রুপ ও রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই গ্রুপগুলোর অধিকাংশ সদস্যের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। এরা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল ও ভাড়ায় খুনের সঙ্গে জড়িত। এদের অনেক নেতাই দেশের বাইরে থেকে চক্র পরিচালনা করেন—জিসান দুবাইয়ে, মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রে, আর রবিন, ডালিম ও মাহবুব মালয়েশিয়ায় থাকেন।
পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব গ্রুপ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তার ছত্রছায়ায় চলে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেই চলে চাঁদাবাজির অর্থ। আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতেও এসব সন্ত্রাসী চক্রকে ব্যবহার করা হয়। ফলে একের পর এক খুন হলেও তা বন্ধ হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীতে ১৩৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতেই ৩৮টি খুন হয়েছে।