বেরোবি প্রতিনিধি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের যৌথভাবে প্রকাশিত সাতটি গবেষণা আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা এলসভিয়া তার high impact factor-এর একটি জার্নাল “Science of the Total Environment” থেকে প্রত্যাহার করেছে। বিষয়টি সামনে আসলে নড়েছড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রবিবার (২ মার্চ) বিকেলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো.শওকাত আলী মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তবে অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম জালিয়াতির এ অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন,এটি এডিটর ও করেসপন্ডিং এর মধ্যকার ইস্যু। এখানে আমাদের বাকি অথারের ভুল নেই। আমরা শুধু রিভিউ করেছি।’
তবে প্রত্যাহার হওয়া সাতটি গবেষণা পত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, “Personal protective equipment-derived pollution during Covid-19 era: A critical review of ecotoxicology impacts, intervention strategies, and future challenges” শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাটিতে ড.তৌফিকুল ইসলামের নাম করসপন্ডিং অথার হিসেবে রয়েছে এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এই ইমেইলটি দেয়া আছে ([email protected]).
গবেষণা পত্রটিতে প্রথম অথার হিসেবে ড.তৌফিকুল ইসলামের ছাত্র মেহেদি হাসান এবং দ্বিতীয় অথর হিসেবে তৌফিকুল ইসলাম নিজেই আছেন, এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ অথর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুইজন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। গবেষণাটিতে অধ্যাপক আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের ভূমিকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি গবেষণাটির মূল ধারণা, ড্রাফট প্রস্তুত, রিভিউ, এডিটিং ও সুপারভাইজর হিসেবে ছিলেন।
এলসেভিয়ারের এ জার্নালের ওয়েবসাইটে গিয়ে আরো দেখা যায়, ভলিউম ৮৮৯-এর “Managing the invisible threat of microplastics in marine ecosystems: Lessons from coast of the Bay of Bengal” গবেষণাটিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আর্টিকেলটির ১২ জন অথরের প্রথম চারজনই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের, যার মধ্যে অধ্যাপক আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামও আছেন। গবেষণাটিতেও অধ্যাপক আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের ভূমিকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি গবেষণাটির ড্রাফট প্রস্তুত, রিভিউ, এডিটিং ও সুপারভাইজর হিসেবে ছিলেন।
এছাড়া আরেকটি গবেষণা পত্র “Exposure of adult zebrafish (Danio rerio) to SARS-CoV-2 at predicted environmentally relevant concentrations: Outspreading warns about ecotoxicological risks to freshwater fish” যেখানে এই শিক্ষকের ভূমিকা হিসেবে বলা হয়েছে “revised the article critically for important intellectual content”।
ওই জার্নালটির বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত এরকম সাতটি প্রবন্ধ প্রত্যাহার করা হয়েছে, যার সবগুলোতেই এই অধ্যাপকের মূখ্য ভূমিকা ছিলো বলে উল্লেখ আছে। এই অধ্যাপকসহ বুয়েট, রুয়েট, নোবিপ্রবি, হাবিপ্রবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর নামও রয়েছে।
এলসভিয়ার আর্টিকেলগুলো প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, আর্টিকেলগুলো প্রকাশনার পর Elsevier- (Research Integrity & Publishing Ethics) দল কর্তৃক পরিচালিত একটি তদন্তে দেখা যায় যে, গবেষণাগুলো জমা দেয়ার সময় গবেষকদের মধ্যে থেকে প্রস্তাবিত যে রিভিউয়ারের নাম দেয়া হয়, অনেকক্ষেত্রে রিভিউয়ারদের নাম ছিল ভুয়া আবার কিছু গবেষণায় রিভিউয়ারের অজ্ঞাতসারে নিজেরাই বা পরিচিত কাউকে দিয়ে পেপার রিভিউ করে সেগুলো জমা দিয়ে পাবলিশ করানো হয়।
সবগুলো গবেষণাতেই এই ভুয়া রিভিউয়ারদের নাম এবং ভুয়া যোগাযোগের তথ্য (Corresponding Author) ব্রাজিলের গুইলহের্মে মালাফাইয়া গবেষণা জমা দেওয়ার সময় প্রদান করেছিলেন। এ ধরনের কাজকে গবেষণায় নৈতিক লঙ্ঘন, গবেষণায় স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতাকে ব্যাহত করেছে বলে এলসভিয়ার থেকে জানানো হয়। তাই জার্নালের প্রধান সম্পাদক গবেষণাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আস্থা হারিয়েছেন এবং এগুলো প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে প্রত্যাহারের নোটিশ জানানো হয়।
জানা যায়, এই পেপারগুলোর লেখকদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রাজিল। এ ছাড়াও সৌদি আরব, ব্রুনেই দারুসসালাম ও আর্জেন্টিনারও দুই-একজন করে রয়েছেন। পেপারগুলোর প্রকাশের সময় ফেব্রুয়ারি-নভেম্বর ২০২৩, ডিসেম্বর ২০২৪ এবং ফেব্রুয়ারি ২০২৫।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে, সেলিম সাদমান নামের একজন বলেন, “আমি শুধুমাত্র কো-অথর ছিলাম, প্রধান লেখক নই।” স্যার এই বক্তব্যের মাধ্যমেই এবার আপনি প্রমাণ করে দিলেন আপনার ইথিক্সের মানদন্ড কতটা দুর্বল। এবং এখন আপনি দায় এড়ানোর দুর্বল চেষ্টা করছেন। কারণ: রিসার্চ ইথিক্স অনুযায়ী কো-অথরদেরও গবেষণার সত্যতা ১০০০% যাচাই করার দায়িত্ব রয়েছে। আপনি গবেষণা গ্রুপের সদস্য হবেন, কিন্তু গবেষণার বৈধতা সম্পর্কে অবগত থাকবেন না এটা আবার কেমন ইথিক্স?
তিনি আরে লিখেন, “আর বিশ্বের শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা পাওয়ার যেই বিষয়টা সেটা সবাই এখন জানে যে Stanford University-এর Top 2% Scientists তালিকা মূলত গবেষকদের প্রকাশনা ও সাইটেশন সংখ্যা বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়, গবেষণার গুণগত মান বিচার করে করা হয়না” অনেক কিছুই বলার ছিলো স্যার। শিক্ষকের জায়গা থেকে সম্মান রেখে নিজের মধ্যেই রাখলাম। কিন্তু আপনি যেটাকে অপপ্রচার বলছেন Elsevier কি তা জানে? জানলে স্যার আরো বিপদে পড়বেন।
এর আগেও ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুলের বিরুদ্ধে গবেষণা জালিয়াত নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে সেই সময় তিনি তা অস্বীকার করেন।
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি সবসময় গবেষণার স্বচ্ছতা ও নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। আমার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।