বিডিটাইম ডেস্ক
মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের অনিশ্চয়তার কারণে এই মুহূর্তে তাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
রোববার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। “বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: আঞ্চলিক নিরাপত্তায় কৌশলগত প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ” শীর্ষক এই আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, মিয়ানমারে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন।
সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হলে তৃতীয় দফায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এসেছিল। তিনি বলেন, “আমরা শুরুতে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন স্পষ্ট যে, এই পথ ফলপ্রসূ হয়নি। একজন রোহিঙ্গাও এখনো ফেরত যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কূটনীতি ছাড়তে পারি না, তবে এককভাবে শুধু দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টা কাজে আসবে না। প্রত্যাবাসন অবশ্যই স্বেচ্ছামূলক হতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।”
মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সেখানে কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্র ছিল না। এমনকি অং সান সু চির সময়েও তা ছিল আধা-সামরিক শাসন। এখন দেশটি সরাসরি গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, “যেকোনো টেকসই সমাধানে অবশ্যই তিনটি প্রধান পক্ষ—সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি ও ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টকে (এনইউজি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান একত্রীকরণে নয়, বরং প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই সম্ভব। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ‘মানবিক করিডর’ নয়, ‘মানবিক চ্যানেল’-এর প্রস্তাব দিয়েছে। করিডর ও চ্যানেলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। “আমরা মানবিক করিডর নিয়ে কোনো আলোচনা করিনি বা কোনো চুক্তি করিনি,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের অবস্থান মানবিক ও শান্তিপূর্ণ।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর কেবল মানবিক ইস্যু নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “শিবিরগুলোতে আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের প্রভাব বাড়ছে, এবং দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি সমস্যা আরও গভীর হচ্ছে।”
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসান এবং বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহবুব-উল-আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।