বাকৃবি প্রতিনিধি,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিলের দাবিতে আঞ্চলিক শিক্ষা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এই ছয়টি অঞ্চল নিয়ে ওই আঞ্চলিক অধিবেশনের আয়োজন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাকৃবি শাখা। শুক্রবার (৩১ মে) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মিনি কনফারেন্স রুমে ওই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক গৌতম করের সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হাসানের সঞ্চালনায় ওই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাকৃবি শাখার বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাকৃবি শাখা সূত্রে জানা যায়, ৬ টি দাবিকে সামনে রেখে ওই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। দাবিগুলো হলো- ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রাখতে হবে এবং প্রতি ক্লাসে লিখিত পরীক্ষা ও পাশ-ফেল পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে; নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব বজায় রাখতে হবে; ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি চিহ্নের মাধ্যমে মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিল করে নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করতে হবে এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে শিক্ষকদের হাতে নাম্বার রাখা যাবে না; একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পর পর দুইটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করতে হবে;
প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে; শিক্ষাখাতে জিডিপি’র ৬ ভাগ বরাদ্দ করে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বেতন ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
অধিবেশনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বুনিয়াদী শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে। সরকার জোর করে এই অগণতান্ত্রিক শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়।
বর্তমান সরকার করোনাকালীন সময়ে নিজেদের আস্থাভাজন মুষ্টিমেয় মানুষকে নিয়ে এই শিক্ষাক্রম পরিকল্পনা করে। তাঁরা কাগজে কলমে কেবল ৬২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মতি নেয়। এমনকি জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে এই পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং একইভাবে অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে বা আলোচনা করবে এরকম সুযোগও রাখা হয়নি।
সালমাম সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ মোট জাতীয় উৎপাদনের ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবছরই এই বরাদ্দ কমছে। এর ওপরে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন প্রজেক্ট এবং অ্যাসাইনমেন্টের কারণে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অবিভাবকদের ওপরেও চাপ বাড়ছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন সরঞ্জাম জোগাড় করতে অতিরিক্ত খরচও লাগছে। প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক বা অভিভাবক কারোরই সহযোগিতা পাচ্ছে না। হাতে-কলমে এভাবে শিখলেই চাকরি হবে আমাদের অভিজ্ঞতা সেটি বলে না। এই শিক্ষাক্রম মূলত গরিব ও মধ্যবিত্তদের কাছে থেকে শিক্ষাকে কেড়ে নেওয়ার আয়োজন।’
অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের কেবল ১০ শতাংশ পরিবারের পক্ষে শিক্ষার ব্যয় বহন করা সম্ভব। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা বা প্রয়োজনীয় উপকরণ নাই। এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ১০ শতাংশ ধনীরা উপকৃত হবে এবং বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। শিক্ষাক্রম উন্নত করার আগে ওই শিক্ষাদানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশের বর্তমান শিক্ষা কাঠামোতে উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োগ করলে সেটি কার্যকর হবে না। শিক্ষাকে কার্যকরী করতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হতে হবে ১ঃ১৫।
সেখানে আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ জন। পর্যাপ্ত শিক্ষক, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ব্যতিরেকে এই শিক্ষাক্রম কার্যকরী হবে না। নীতি নির্ধারণ যারা করেন তাদের সন্তানরা এই সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে পড়ে না। কারণে এই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নাই। এই শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী যার ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য আছে সেই কেবল শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবে।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এই ৬ অঞ্চলের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাখার নেতৃবৃন্দ এবং ওই ৬ টি অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকবৃন্দ।