Top 5 This Week

জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

জাবি প্রতিনিধি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে সমাবেশ করেন তাঁরা।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ‘জিম্মি’ করে আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে দাবি করে ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জোরালোভাবে চারটি দাবির কথা উল্লেখ করেন।

দাবিগুলো হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ওপর নৃশংস অত্যাচারের বিচারসহ আটক ও গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত মুক্তি, আন্দোলন চলাকালে নিহতদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর মামলা এবং গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা।

আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে মহুয়াতলায় জড়ো হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে দিয়ে ঘুরে পুনরায় শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে তাঁরা ‘আরিফ সোহেলের মুক্তি চাই’, ‘লাঠি গুলি টিয়ার গ্যাস জবাব দেবে বাংলাদেশ’, ‘আমার ভাই নিহত কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আমার ভাই আহত কেন জবাব চাই দিতে হবে’, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্র–জনতার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ এমন নানা স্লোগান দেন তাঁরা। মিছিল শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জোরালোভাবে চারটি দাবির কথা উল্লেখ করেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমরা একটা যৌক্তিক আন্দোলনে নেমেছি। আমরা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সরকার তার লেজুড়বৃত্তিক ক্যাডার ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে আমাদের প্রতিহত করতে এসেছে। এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা একটি যৌক্তিক, ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার করা হোক। মেধাবীদের অধিকার নিশ্চিত করা হোক। একটি সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক। এ আন্দোলন সরকার বা কোনো দলের বিরুদ্ধে ছিল না। কিন্তু পরে আমাদের ওপর ছাত্রলীগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। যার নির্দেশে এগুলো হয়েছে, সেই স্বৈরাচারী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।’

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আরেক সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হয়, ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানো হয়েছে, বাংলাদেশেও স্বৈরাচারী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালিয়েছে। ডিবি পুলিশ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সমন্বয়কদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধ ঘোষণা করিয়েছে, আমরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা চাই আগে সব সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হোক, তারপর সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেব।’

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক। আমার যে শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে, আমি তার বিচার চাই। আমি চাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ঘুমাক, নিরাপদে থাকুক, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসুক, ক্লাসে ফিরে আসুক।’

প্রসঙ্গত, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক গতকাল রোববার এক ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থীদের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপরই অন্য সমন্বয়কদের মধ্যে কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে এই আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish