বিডিটাইম ডেস্ক
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে গুমের শিকার ব্যক্তির স্বজনরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে ভয় দেখাতে পুলিশ। এমন প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এমনকি গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও পুলিশের এই পুরোনো চর্চা বন্ধ হয়নি। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের শিকার এক ব্যক্তির স্বজন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন, জিডি করতে গেলে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ওসির কাছে গেলে তিনিও বলেন, ‘প্রশাসনের নামে জিডি করা যাবে না।’ অভিযোগকারী বলেন, “তিন–চারদিন গিয়েছিল আমার ওয়াইফ (স্ত্রী)। থানায় গেলে বলে, আমরা তো এখন জিডি নিতে পারব না। ডিবির আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) বলে যে, তোমার বউ প্রতিদিন আইসা কান্নাকাটি করতো। থানায় বলেছিল- যদি র্যাব–পুলিশ–ডিবি নিয়ে থাকে, জিডি করলে গুম কইরা ফালায়।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত একটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে থাকা গুমের শিকার এক ব্যক্তি গোয়েন্দা হুমকির মুখে পড়েন। পরিদর্শনের পর তাকে ফোন করে ভয় দেখানো হয়। থানায় জিডি করতে গেলে সেটিও নিতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। পরে কমিশনের এক সদস্য হস্তক্ষেপ করলে জিডি গ্রহণ করে পুলিশ।
এই বাস্তবতা থেকেই স্পষ্ট, শুধু রাজনৈতিক প্রশাসনের পরিবর্তন ঘটলেও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে কমিশন জানায়, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, অভিযোগে যদি ‘অপহরণ’ শব্দের পরিবর্তে ‘নিখোঁজ’ শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং র্যাবের নাম না আসে, তাহলেই কেবল অভিযোগ নেওয়া হবে।
কমিশনে জমা দেওয়া প্রায় ১ হাজার ৮০০টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র ২৫০টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো নথিপত্র, আদালতের রেকর্ড বা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর কোনো আনুষ্ঠানিক প্রমাণ নেই— কারণ পরিবারগুলো জিডি করতেই পারেনি বা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুমের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই বহু বছর আগের হওয়ায় কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) বা প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া কঠিন। আবার ৫ আগস্ট অনেক থানার নথিপত্র অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়ায় তদন্তে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে।
গত ৪ জুন ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: অ্যা স্ট্রাকচারাল ডায়াগনোসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয় কমিশন।