Top 5 This Week

জ্বলছে রাজনৈতিক অঙ্গন , বিভাজনের মুখে ‘জুলাই ঐক্য’

বিডিটাইম ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের “বিভাজন ভুলে ঐক্যের” আহ্বানের মধ্যেই দেশের রাজনীতি প্রবল উত্তেজনার মুখে পড়েছে। সরকারের আইন উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি ও বিএনপির বক্তব্যে ফুটে উঠছে—জুলাই অভ্যুত্থানের ঐক্য আজ চরম এক পরীক্ষার মুখোমুখি।

বৃহস্পতিবার (২২মে) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন,“ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়। বিভাজনমূলক শব্দচয়নের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।” সরকারে আরও এক দিন থাকলেও অভ্যুত্থানকালীন সব শক্তিকে সম্মান জানিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

এই পোস্টের সময়টিই তাৎপর্যপূর্ণ। ঢাকার রাজপথে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিএনপির দাবিতে—দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ চাই, ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের স্বীকৃতি চাই, আর চাই ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার। অপরদিকে, এনসিপিও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভে উত্তাল।

এরই মধ্যে আলোড়ন তোলে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বুধবারের বক্তব্য। তিনি আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন চেয়ে অফিসার্স অ্যাড্রেসে যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে অনেকেই দেখছেন সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকায় ফের প্রবেশের পূর্বাভাস।

এই অবস্থায় জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দুটি ফেসবুক পোস্টে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় আসার অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, “জাতীয় স্বার্থে স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে চলি, যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হই।”

তবে সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে ধারালো ভাষা এসেছে এনসিপির ভেতর থেকেই। আখতার হোসেন লিখেছেন, “জুলাইয়ের বেঁচে ফেরা যোদ্ধারা এদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন হতে দেবে না।”
অন্যদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলছেন, “জুলাই-আগস্টে সবাই মিলে উপড়ে ফেলেছিল ফ্যাসিবাদের মূল! এখন আমরা সবাই মিলে যা করছি, তা হলো অমার্জনীয় ভুল।”

আরও বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন,“হাসিনার শাসনামলে খুনের বিচার নেই, জামিন হয় টাকার সুপারিশে, তাহলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কি দায় এড়াতে পারেন?” তিনি আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার ইঙ্গিতও দেন।
একটি পোস্টে আরও লেখেন,“মব তৈরি করে যদি হাইকোর্টের রায় নেওয়া যায়, তাহলে হাইকোর্টের দরকার কী?”

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আবার সেনাবাহিনীকে ঘিরে রাজনৈতিক সালিশের আশঙ্কা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনের মতো আরেকটি অধ্যায় কেউ যেন প্রশস্ত না করে। সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।”
তাঁর মতে, “ছাত্র উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে, সরকারে থাকার আকাঙ্ক্ষা আঁকা হচ্ছে। অথচ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা থেকে।”

সবশেষে, জুলাই ঐক্যের মূল সংগঠকদের একজন আবদুল হান্নান মাসউদ তার তীব্র অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন,“নিজ স্বার্থে আপনারাই জুলাইকে ধ্বংস করেছেন। বারবার বলেছি ঐক্য বিনষ্ট করবেন না, দেখেছি শুধু স্বেচ্ছাচারিতা আর অহংকার।”
তার ভাষায়, “কয়টা মিডিয়া শেখ হাসিনার দুঃশাসনের প্রতিবেদন করছে? অথচ আমরা যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, তারাই এখন টার্গেট হচ্ছি।”

একদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ—বিচার দাবি, পদত্যাগ দাবি, সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরে গভীর ফাটল। ‘জুলাই ঐক্য’ যেন আজ নিজেই নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটিই : ঐক্য থাকবে, নাকি আবারও ইতিহাস রক্তে লেখা হবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish