বিডিটাইম ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ডাকসু নির্বাচন এখন সময়োপযোগী ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ‘মঙ্গলবারের গপ্পোসপ্প’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডাকসু নির্বাচন: অধিকার না আনুষ্ঠানিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিনিধি সজীব হোসেন।
আলোচনায় অংশ নেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দেশের রাজনৈতিক চেতনার সূচনা। এখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি না থাকলে জাতীয় রাজনীতিও দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৫ বছরের এই শূন্যতা দূর করতে ডাকসু নির্বাচন অত্যন্ত প্রয়োজন।”
ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক ডাকসুর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “২০১৯ সালের নির্বাচন ছিল অনিরাপদ ও অসম। এবারও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে একই ধরনের অভিজ্ঞতা হবে। বাস, চিকিৎসা ও আবাসন—এ তিনটি মৌলিক চাহিদা নিয়ে কাজ করতে ডাকসু প্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও আজও ডাকসু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করতে হয়। কারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নেই। সে কারণেই ছাত্রদের রাস্তায় নামতে হয়।”
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, “প্রশাসন বরাবরই ডাকসু ইস্যুকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখাতে চায়। অথচ নিরাপত্তার অভাব, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড, ঘৃণা স্তম্ভ মুছে ফেলা এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোনো জবাবদিহি নেই। ডাকসু রাষ্ট্রের বিকল্প শক্তির কাঠামো হিসেবে কাজ করতে পারে।”
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, “ডাকসু আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা ৩৭৭টি প্রস্তাব দিয়েছিলাম প্রশাসনের কাছে, যার মধ্যে ৩১টি গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ভিপি ও এজিএস পদে নারী প্রতিনিধির কথা বলেছি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মান জানানো এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার দাবিও রাখি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক পরিচয় শিক্ষার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে। প্রশাসন আন্তরিক না হয়ে বরং তড়িঘড়ি করে ডাকসু করতে চাইছে। তাই একটি উপযোগী কাঠামো তৈরিতে খোলামেলা বিতর্ক ও আলোচনা প্রয়োজন।”
ছাত্রনেতারা একমত হয়েছেন—ডাকসু নির্বাচন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র বৈধ ও গণতান্ত্রিক মাধ্যম। এখন সময় এই নির্বাচনকে কার্যকর, স্বচ্ছ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক করে তোলার।