কুবি প্রতিনিধি
“তোরে দেখতে গাঁজাখোরের মতো লাগে”—এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিনিয়রদের লাগাতার র্যাগিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কয়েকজন নবীন। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ক্লাস শুরুর প্রথম দিন থেকেই সিনিয়ররা পরিচয় পর্বের আড়ালে শুরু করেন হেনস্তা। একপর্যায়ে তাকে ‘তালতলা’ নামক নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে অপমান করা হয়। সেখানে তাকে বলা হয়, “তোরে দেখতে গাঁজাখোরের মতো লাগে।” এরপর তাকে জোর করে সিগারেট খাওয়ানো হয় এবং এক সিনিয়র আপুকে কল দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী জানান, ২ জুলাই রাত ১০টার দিকে বিভাগের সিআর তাকে সিনিয়রদের সঙ্গে দেখা করাতে তালতলায় নিয়ে যান। সেখানে মো. ওয়ালি উল্লাহ, রাফিও হাসান, ও অরবিন্দু সরকার তার সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলেন এবং দীর্ঘ সময় আটকে রাখেন। পরদিন একইভাবে আবার ডেকে নেয়া হয় এবং আরও অপমানজনক আচরণ করা হয়। একপর্যায়ে তার ও বন্ধুদের মোবাইল রেখে ছবি তোলা হয়।
আরেক শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, ওরিয়েন্টেশনের দিন সিনিয়রদের আচরণের সমালোচনা করায় তাকে টার্গেট করা হয়। পরবর্তীতে তার মায়ের নামে গালিগালাজ করে, ১০ বার সালাম দিতে বাধ্য করা হয় এবং বেঞ্চের ওপর দাঁড় করানো হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন—মো. ওয়ালি উল্লাহ, রাফিও হাসান, অরবিন্দু সরকার (নজরুল হল), মোন্তাসির বিল্লাহ পাটোয়ারী বিজয় (২৪ হল), তিশা মনি হৃদ ও সাদিয়া সরকার (মেসে অবস্থানকারী)। তাদের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন, ভয়ভীতি, গালিগালাজ এবং র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্তদের কেউ কেউ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তারা শুধু “চা খাওয়াতে” নিয়েছিলেন। তবে ১৩ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ডিং প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে, যাতে গালিগালাজ ও হুমকির প্রমাণ মেলে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরিন বলেন, “প্রশাসনের নীতিমালার আলোকে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “আমি এখনই বিষয়টি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করব এবং একাডেমিক মিটিংয়ে তুলব।”
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় র্যাগিং সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।