বিডিটাইম ডেস্ক
গত দুই দশকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে চলেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াতে পারে মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশে। বিনিয়োগও নেমে এসেছে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে।
বিশ্বব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং মূলধনি পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধীরগতির মূল কারণ। এসব কারণে বেসরকারি বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৯–২০ অর্থবছরে, কোভিড–১৯ মহামারির ধাক্কায় দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশে। এরপর এটি সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হতে যাচ্ছে। সেই অর্থবছর বাদ দিলে এত নিচে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমেছিল ২০০১–০২ অর্থবছরে, ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূলধনি পণ্যের আমদানি হ্রাস পাওয়ায় শিল্পখাতেও ধীরগতি দেখা দিয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিকবার সুদের হার বাড়িয়েছে, তথাপি মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, যা ভোক্তা ও বিনিয়োগকারী উভয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ব্যবসাবান্ধব সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ আবারও উন্নত হতে পারে। তবে বর্তমানে নীতিগত অনিশ্চয়তা এই পথে বড় বাধা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি নীতি সুদহার কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেমন, ভারত ২০২৫ সালের শুরুতে সুদের হার হ্রাস করেছে। ভুটান ও নেপালে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ছে, যেখানে বাংলাদেশে এই খাতে বরাদ্দ কমতে পারে। পরিবর্তে চলতি ব্যয় ও ভর্তুকি বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৫–২৭ সময়কালে মাথাপিছু আয় গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়বে, যা দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক হবে। তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—এই তিন দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার করোনা-পূর্ব দশকের তুলনায় কম থাকবে, ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণের গতি মন্থর হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ হতে পারে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হবে মাত্র ১.৭৯ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৩.৩০ শতাংশ। শিল্পখাত সামান্য বাড়লেও সেবা খাতে কমতি দেখা যাবে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০২৬–২৭ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। এদিকে, নেপাল ও ভুটানে আগামী অর্থবছরগুলোতে প্রবৃদ্ধির গতি আরও বাড়বে। যেমন, নেপালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায় শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং বিদ্যুৎ রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। ভুটানে বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু ও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি—মূলধনি পণ্যের আমদানি সংকোচন, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা। এসব কাটিয়ে উঠতে হলে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই—এমনটাই মনে করছে বিশ্বব্যাংক।