Top 5 This Week

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

Spread the love

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুপারভাইজার পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে নিয়োগকে ত্রুটিপূর্ণ  বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। অন্যদিকে ইউজিসির অভিযোগ নাকচ করে নিয়োগে কোন নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুপারভাইজার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি চাওয়া হয় তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১৪ জন চাকুরীপ্রার্থীর মাঝে দুজন হল সুপারের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ৭ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে ৩১ আগস্টের মৌখিক পরীক্ষায় ত্রিশালের গুজিয়াম আলীম মাদ্রাসায় চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়ে নিয়োগ হয় সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তির। তবে হল সুপারভাইজার পদে নিয়োগ হলেও শুরু থেকেই তিনি প্রশাসনিক ভবনে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী জাহানারা মুক্তা বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের কাছে অভিযোগ নিয়ে দ্বারস্থ হয়ে প্রতিকার না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। নিয়োগের তথ্য চেয়ে আবেদন করেও সাড়া পাওননি ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং  ইউজিসিতে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তে নামে ইউজিসি।  তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে ইউজিসি জানায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে বিভিন্ন সময় প্রেরিত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী  ‘হল সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগটি ত্রুটিপূর্ণ। অভিজ্ঞতা সনদে উল্লেখিত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত খাত থেকে বেতন-ভাতাদি পেতেন সোহেল রানা। এমন খন্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতার সনদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত/স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রদান নিয়েও প্রতিবেদনটিতে প্রশ্ন তুলেছে ইউজিসি। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিন্ডিকেটে বিষয়টি উপস্থাপন করে সিদ্ধান্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে লিখিতভাবে অবহিত করতে বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনটিতে।

সর্বশেষ সংশোধিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামো বহির্ভূত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত থাকলে উদ্বৃত্ত জনবলের এমপিও এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদির শতভাগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বহন করার নির্দেশ থাকলেও, ইউজিসি প্রতিবেদনে উঠে আসে সোহেল রানার ভেতন-ভাতাদি পেতেন গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ব্যাক্তিগত খাত থেকে।

এ ব্যাপারে গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন  বলেন, সোহেল রানা মাদ্রাসার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ছিলেন। তাকে খণ্ডকালীন নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়েছে। বেতন ভাতা নিয়ে সর্বশেষ সংশোধিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ দেখালে সুর বদলিয়ে তিনি বলেন, মাদ্রাসার টাকা কেনো দিবো? আমার কাজ আমি করতে পারিনি, যার জন্য আমি পারিশ্রমিক দিয়েছি তাকে।

এর আগে হল সুপারভাইজার পদে  নিয়োগে অস্বচ্ছতা এবং ভাইভা বোর্ডে নারী চাকরি প্রার্থীকে কটুক্তির অভিযোগ এনে গত বছরের  ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী দুই চাকরিপ্রার্থী। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের  সাবেক শিক্ষার্থী জাহানারা মুক্তা এবং একই শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান।

পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ এবং ওই দুই চাকরিপ্রার্থীকে আইনী নোটিশ পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী জাহানারা মুক্তা জানায়, নিয়োগবোর্ডের ভাইভায় নারীদের হেয় প্রতিপন্ন ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। ভাইভার একপর্যায়ে উপাচার্য আমাকে বলেন আমি এই জবটি পাবার জন্য কি কি স্যাক্রিফাইস করতে পারি? উনি এটাও বলেন, মেয়েরা কষ্ট করতে পারেনা, দৌড়াদৌড়ি করতে পারেনা, মেয়েরা জব পাবার যোগ্য না। মেয়েরা সংসার সামলাবে, স্বামী বাচ্চা-কাচ্চা দেখবে, জব করতে কেনো যে আসে এরা, একটু বেশি বুঝে। যে প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছে, তার পরীক্ষায় প্রবেশ পত্র পাওয়ার যোগ্যতা ছিলো না। তিন বছরের অভিজ্ঞতা সনদ চাইলেও সেই প্রার্থী আবেদনে ২ বছর ১ মাসের অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে পেয়েছেন চাকরি। তিনি এমন অস্বচ্ছ ও নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুণরায় স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার দাবি এবং নারী জাতিকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে আহবান জানান।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির জানায়,  সোহেল রানার আবেদন যাচাই-বাছাই করে অভিজ্ঞতা সনদ এবং অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক পেয়েছি। আমাদের দৃষ্টিতে ইউজিসির কথাটা সঠিক নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, নিয়োগে কোনো ত্রুটিপূর্ণ হয়নি। তারপরও ইউজিসি বলেছে এটি সিন্ডিকেটে নিয়ে যেতে, ইউজিসির কথা মতো আমরা সিন্ডিকেটে নিয়ে যাবো। সিন্ডিকেট সদস্যদের মতামত অনুযায়ী যদি তাতে কারো চাকরি থাকে থাকবে, না থাকলে থাকবে না। কারও প্রতি আমাদের আলাদা পক্ষপাত নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish