কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ অক্টোবর (রবিবার) থেকে শুরু হয়েছে নবীনদের পথচলা। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য নতুন ক্যাম্পাসে প্রথম দিনটি এক বিশেষ স্মৃতিময় হয়ে থাকে।
ক্যাম্পাসের চারপাশে তখনও সকালের স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে। একের পর এক নতুন শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্নপূরণের জন্য মাটির গন্ধ মাখা এই প্রাঙ্গণে পা রেখেছে। ছড়িয়ে পড়েছে হাসি-আনন্দের ধ্বনি, মিলছে নতুন বন্ধু, নতুন পথ, এবং নতুন সম্ভাবনার হাতছানি। ক্যাম্পাসে পা রেখে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের খুঁজে পেল এক নতুন জগতে।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের ১৮তম আর্বতনের শিপন নামের শিক্ষার্থী বলেন, “আমি কল্পনাই করতে পারিনি যে আমার প্রথম দিনটা এতটা আনন্দময় হবে। সিনিয়ররা আমাদের অভ্যর্থনা জানায়, পুরো ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণা যেন এক নতুন পৃথিবী হয়ে উঠেছে আমার কাছে।”
এমন অনুভূতির সঙ্গে নতুনদের মধ্যে ছিল এক ধরনের মুগ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ইচ্ছা।
ফার্মেসি বিভাগের ১৮ তম আর্বতনের রুমানা নামের শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেওয়ার সময় একটু ভয় আর অজানা আশঙ্কা ছিল। তবে প্রথম দিনেই সিনিয়রদের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে বুঝতে পারলাম, এই জায়গাটি আমার জন্য বিশেষ হবে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখে খুব ভালো লাগছে, বিশেষ করে মুক্তমঞ্চ আর শহীদ মিনার এক কথায় দারুণ!”
এছাড়াও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৭ তম আর্বতনের শিক্ষার্থী দেলোয়ার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রমের শেষে ২০২৩ সালে যদি আমার জীবনে কোনো প্রাপ্তি এসে থাকে সেটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় একটি আসন দখল করে নেওয়া।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে আমার প্রথমটি ছিল একদিকে প্রবল উৎকন্ঠার অন্যদিকে মনে মনে আনন্দের সীমা ছিলনা। প্রথম এসেই আমার ব্যাচের বন্ধুদের সাথে এতো গভীরভাবে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারব সেটা বোধই অকল্পনীয় ছিল৷
তারপর থেকেই প্রতিটি সুন্দর দিনের সূচনা হতো ডিপার্টমেন্টে ক্লাস করার মাধ্যমে। যাচ্ছে সময়,স্মৃতিময় মুহুর্ত তৈরি হচ্ছে প্রত্ন পরিবারের সাথে”।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. সোহরাব উদ্দীন সৌরভ নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা মানে শুধু একটি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এখানে আপনাদের সবার মনের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দিতে হবে, একে অপরের মাঝে নিজস্ব চিন্তাধারা ও স্বপ্ন ভাগাভাগি করতে হবে। এই জায়গায় এসে অভিযোজন করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং তা করতে হলে ধৈর্যশীল হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আপনাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচয় করাবে। এক্ষেত্রে নিজেকে উদার এবং নতুন অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত রাখুন। এখানে আপনাদের বিভিন্ন নতুন নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে, যা আপনাদের জীবনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া, প্রথম দিনের উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু আলাপও চলে। নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ক্যান্টিন, মুক্তমঞ্চ এবং প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজায়িত প্রাঙ্গণ।
প্রথম দিনটি ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনদের জন্য এক বিশেষ যাত্রার সূচনা। নতুন মুখ, নতুন বন্ধুত্ব, নতুন স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের জন্য অঙ্গীকার—সবকিছু মিলিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। এই দিনটির স্মৃতি এবং প্রেরণার কথা সবসময় মনে রেখে তারা যেন নিজেদের জীবনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছায়।
লেখকঃ
শিক্ষার্থী,
মো.আসলাম,
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।