কুবি প্রতিনিধি
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে একে একে পদত্যাগ করেন তার অনুগত প্রশাসনের কর্তারা। তারই প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন,প্রক্টরিয়াল বডি। রোববার (১১ আগস্ট) উপাচার্য ও রেজিষ্ট্রার পদত্যাগ পত্র জমা দেন। গত শনিবার রাত ১১ টায় তাঁরা রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। তবে গত শনিবার উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডিকে রবিবারের মধ্যে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমাকে উপাচার্যের পদত্যাগ পত্র মেইল করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রেরিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত কারণে উপাচার্যের পদ থেকে এই পত্রের মাধ্যমে অদ্য অপরাহ্ণে পদত্যাগ করিতে আপনার নিকট পদত্যাগপত্র পেশ করিলাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক এই কামনা করছি। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আমাকে বাধিত করিবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর আমি আমার অভিজ্ঞতা, সততা, নৈতিকতা, দক্ষতা ও আইন মেনে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি লিডিং ও মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। এজন্য প্রথমেই আমি উদ্ভাবনে নেতৃত্ব, সমাজের ক্ষমতায়ন, উন্নয়ন, মানব কল্যাণ, সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধকরণ এবং টেকসই প্ল্যানেট গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ভিশন তৈরী করি। এই ভিশন অর্জনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করি, এবং শিক্ষা, শিক্ষণ ও গবেষণার সংস্কৃতি ও পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে রূপান্তর করার জন্য অনেক নূতন ধরনের স্কিম গ্রহণ করি।
অন্যদিকে পদত্যাগের বিষয়ে প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা পদত্যাগ করেছি। এ ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারবো না। আমার আর মন্তব্য নেই।
অভিযোগের রয়েছে গত ২ বছর মধ্যে বিতর্কিত নিয়োগ, যারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছেন তাদের নিয়ে নিজস্ব বলয় গঠন, আইন না মেনে বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ, ঢাকার গেস্ট হাউস ব্যক্তিগতভাবে কুক্ষিগত করে রাখা, নিয়ম না মেনে গাড়ি ক্রয়, তথ্য গোপন করে উপাচার্য হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত বেতন ও ইনক্রিমেন্ট নেওয়া। গত ২৮ মার্চ হত্যা মামলার আসামীদের নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা করেন। এসময় তিনি নিজেই একজন শিক্ষককে কনুই দিয়ে ঘুষি দেন। ঐদিনই শিক্ষক সমিতি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১০ এর (৩) ভাইস-চ্যান্সেলরের পদ শূন্য হইলে কিংবা ছুটি, অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে তিনি তাঁহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, শূন্য পদে নব-নিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা ভাইস-চ্যান্সেলর পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত চ্যান্সেলরের ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত না থাকা সাপেক্ষে 1[প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর], ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করিবেন৷