Top 5 This Week

পান্থকুঞ্জে প্রকল্পের কাজ স্থগিত

বিডিটাইম ডেস্ক

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ উদ্যানকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা এবং সেখানে চলমান গাছরক্ষা আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে রায় দিয়েছেন একটি গণ আদালত। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এলাকাটিতে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ গাছরক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এই গণ আদালত ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনুষ্ঠিত প্রথম গণশুনানি। শুক্রবার (৩০মে) বিকেলে পান্থকুঞ্জ উদ্যানের উত্তর প্রান্তে ‘পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা: জনগণ বনাম অন্তর্বর্তী সরকার’ শীর্ষক এই গণ আদালতের আয়োজন করা হয়।

গণ আদালতে জানানো হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে গাছ কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণ বন্ধের দাবিতে পান্থকুঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন গাছরক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা। এই সময়ের মধ্যে প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

আদালতের মঞ্চ সাজানো হয় আসল বিচারকক্ষের আদলে—ছিল বিচারকের আসন, বাদী-বিবাদীপক্ষের নির্ধারিত জায়গা, সাক্ষীদের কাঠগড়া এবং দর্শকদের আসন। তবে গণ আদালতে বাদীপক্ষ উপস্থিত থাকলেও বিবাদীপক্ষে কেউ হাজির হননি।

বিবাদীপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক, রাজউক, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংস্থাকে।

আদালতে বাদীপক্ষের প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন গাছরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে জনস্বার্থের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি এবং পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের সময়ের জনবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

গাছরক্ষা আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান ছয়টি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন, যার মধ্যে ছিল সংবিধান লঙ্ঘন, পরিবেশ ছাড়পত্র না নেওয়া, বৈষম্যমূলক চুক্তি, জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম, মৃত্যুর দায় থেকে দায়মুক্তি এবং পরিবেশ ধ্বংস।

সাক্ষ্য দেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহম্মদ খান, গবেষক পাভেল পার্থ, পরিবেশকর্মী সৈয়দা রত্না, পান্থকুঞ্জ প্রভাতি সংঘের সিরাজ উদ্দিন এবং শিল্পী সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির।

বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন গীতি আরা নাসরিন (প্রধান), অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং সামসি আরা জামান।

রায়ের পর্যায়ে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে গোপনীয়তা, দুর্নীতি ও আইনের লঙ্ঘন সুস্পষ্ট। পরিবেশ ছাড়পত্র ভেঙে পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল এলাকায় কাজ করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পান্থকুঞ্জের দুই হাজার গাছ কাটার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায়ের এক অংশে বলা হয়, এই প্রকল্পে নাগরিকের মৃত্যু হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা অবহেলাজনিত হত্যার আওতায় পড়ে। তাই দণ্ডবিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চূড়ান্ত রায়ে প্রধান বিচারক গীতি আরা নাসরিন বলেন, বৈষম্যমূলক এই চুক্তির মাধ্যমে জনস্বার্থবিরোধী প্রকল্প চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায়ের ভিত্তিতে পান্থকুঞ্জ উদ্যান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং গাছরক্ষা আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গাছরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, “আমরা গণ আদালতের রায়কে সম্মান জানাই। আশা করি, সরকারপক্ষও এই রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish