বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যোগ দিতে নোটিশ দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শওকত আলম মীর।এতে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
জানা গেছে, ১ জুলাই কলেজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নোটিশে বলা হয়, নবগঠিত কলেজ শাখা ছাত্রদল কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ২ জুলাই সকাল ১১টায় কলেজের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো।
নোটিশটি সামনে আসার পর থেকেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে মনে করছেন, এটি সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯–এর লঙ্ঘন। বিধি-২৫(১) অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না এবং বিধি-২৫(৩) অনুযায়ী তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। সেই প্রেক্ষাপটে অধ্যক্ষের এমন নোটিশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা ও দায়িত্ববোধের পরিপন্থি বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কলেজ শাখার সদস্য সচিব নিয়তি সরকার বলেন, “একজন সরকারি অধ্যক্ষ রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছেন। এটা নিন্দনীয় এবং একজন প্রশাসকের জন্য অগ্রহণযোগ্য।” একই সুরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার আহ্বায়ক জয় ভৌমিক বলেন, “একজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের উচিত নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু তিনি প্যাডে নোটিশ দিয়ে একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা অনভিপ্রেত।”
অন্যদিকে, কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম বিপ্লব দাবি করেন, “আমরা সবাইকে মৌখিক আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্তু কলেজ প্যাডে অধ্যক্ষ নিজে থেকে নোটিশ দেবেন—এমন অনুরোধ আমাদের পক্ষ থেকে করা হয়নি।”
প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখে অধ্যক্ষ প্রফেসর শওকত আলম মীর জানান, “নোটিশটি অনিচ্ছাকৃতভাবে জারি হয়েছিল। পরে আমি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।”
তবে শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক তৎপরতার এমন খোলামেলা উপস্থিতি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং নৈতিকতা নিয়েই বড় প্রশ্ন তোলে। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা কলেজ গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে তদন্তের দাবি উঠতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।