ববি প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) গ্রাউন্ডফ্লোরের চিরচেনা রূপ বদলে গেছে গত দু’দিনে। চারিদিকে বস্তার পর বস্তা, কোনটাতে শুকনা খাবার, ডাল, তেল আবার কোনটানে কাপড়, ঔষধ। এভাবে বস্তাবন্দি করে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডফ্লোরে ত্রাণ নিয়ে সাধারণ মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশের লোকালয় থেকে মানুষ ত্রাণ নিয়ে জড়ো করছেন এখানে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সারাদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাউন্ডফ্লোরের চিত্র ছিলো এমনি৷ বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণত্রাণ সংগ্রহ শুরু করেন আজ সকাল থেকেই। বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায় তারা বুথ বসিয়ে গণত্রাণ সংগ্রহ করেন। এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের এসময় বন্যার্তদের জন্য গণত্রানের আহ্বান জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যার যা দেওয়ার সামর্থ্য আছে তা নিয়ে ছুটে আসেন বুথ গুলোতে। বরিশাল নগরির রূপাতলি, আমতলা, চৌমাথা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, নথুল্লাবাদ ও টাউনহলের সামনে গণত্রানের বুথ বসান। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর দূরান্তের গ্রামগুলো থেকেও সাধারণ মানুষ নিজেদের উদ্যোগে ত্রাণ উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডফ্লোরে জড়ো করতে থাকেন। এখান থেকে সব জিনিস বাছাই করে গুছিয়ে সেগুলো বস্তা করে প্রস্তুত করা হচ্ছে বন্যার্তদের সাহায্যে পাঠানোর জন্য।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০টির অধিক সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৩ ও২৪ আগস্ট দুইদিন গণত্রানের তহবিল সংগ্রহ করছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দপদপিয়া সেতুর টোলের একদিনের টাকা ত্রাণে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এই টোলের টাকা আদায় করেন। টোলে একদিনে ৩লক্ষ ৮২হাজার ৬৬০ টাকা উঠেছে বলে জানান টোল আদায়কারী ববি শিক্ষার্থী রাশেদ।
ত্রাণ দিতে আসা ষাটোর্ধ বয়সি আলী আহমাদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বন্যায় মানুষগুলো ঘর ছাড়া, তাদের খাবার নেই ঘুমানোর জায়গা নেই রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে। কি খাবে কোথায় যাবে কোন কিছুরই ঠিক নেই। ছোট ছোট বালকেরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছে এটা ভেবেই তো রাতে ঘুমাতে পারি না। আপনাদের মাইকিং শুনে যখন জানতে পেরেছি তখন গ্রামের মানুষের থেকে যে যা পারি সংগ্রহ করে নিয়ে আসছি।
ত্রাণ নিয়ে আসা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি এই কয়দিনে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য গুছিয়ে রেখেছিলাম। যখনি জানতে পারছি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রহ করতেছে তখনি নিয়ে চলে আসছি। আজকে তাদের জায়গাও আমিও থাকতে পারতাম আল্লাহ তাদেরকে রহম করুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রশিদ সরদার বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জনগণের টাকায় পড়াশোনা করি। যারা আমাদের পড়াশোনার খরচ জোগায় দুর্যোগে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠনসমূও, সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করছি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমরা ব্যপক সাড়া পাচ্ছি। সবার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগীতা করছে। ইতিমধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম বন্যাকবলিত এলাকায় পৌঁছেছে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে আগামী রোববার অথবা সোমবার তাদের বাকিটিমগুলো ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের মধ্য বিলিয়ে দিবেন।