বিডিটাইম ডেস্ক
দেশে বিনিয়োগ সম্মেলনের নামে ‘সার্কাস’ হচ্ছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেছেন, প্রকৃত বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক অর্থনীতি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি বা বিদেশি— কেউই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।
শুক্রবার (৯ মে) চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী রোডে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন— জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত ‘তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা এখনো নির্বাচিত সরকারের অধীনে নেই। জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও আসবে না, বিনিয়োগও হবে না। বিনিয়োগের নামে দেশে এখন অনেক সার্কাস চলছে, যেটা বাস্তবসম্মত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিনিয়োগের ওপর আমাদের নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু যারা বিনিয়োগ করতে আসে, তারা প্রথমেই জানতে চায় নির্বাচন কবে হবে। কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। তাই নির্বাচিত সরকার দরকার, আর দরকার অর্থনীতির গণতন্ত্রীকরণ।”
খসরু আরও জানান, “বাংলাদেশ একটি হাইলি রেগুলেটেড কান্ট্রি। এখানে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে গেলে নানা রকম বাধা আসে। সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি।”
তিনি জানান, বিএনপির ৩১ দফায় শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এটি ব্যয় করা হবে দক্ষতা ও পুনঃদক্ষতা উন্নয়নে।
সেমিনারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, “বর্তমানে সরকারের পরিবর্তনের সবচেয়ে সম্ভাব্য বিকল্প বিএনপি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তরুণদের মধ্যে বড় ধরনের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে।”
কর্নেল ইউনিভার্সিটির লেকচারার জামাল উদ্দিন ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, “প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। অথচ দেশে বেকার যুবসমাজের কোনো সুনির্দিষ্ট ডাটা নেই, যা নীতিনির্ধারণে বড় বাধা।”
চলচ্চিত্র নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেন, “তারুণ্য কর্মসংস্থান চায়। কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। অথচ ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক বা নেটফ্লিক্সের কোনো অফিস বাংলাদেশে নেই। এগুলো থাকলে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে যেতো।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরিন খান বলেন, “জিয়াউর রহমান থেকে দেশপ্রেম, খালেদা জিয়া থেকে আপসহীনতা, তারেক রহমান থেকে স্বজন হারানোর বেদনা ভুলে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ নেওয়া যায়।”
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মূল কারণ ছিল তরুণদের বেকারত্ব। যখন চাকরির বাজার সংকুচিত হলো, তখন তরুণরা শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী চরিত্র উপলব্ধি করতে পারল।”
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিন। সঞ্চালনায় ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি পেশাজীবীরা। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও, যেমন: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মাহবুবুর রহমান শামীম, ব্যারিস্টার মীর হেলালসহ অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।