বিডিটাইম ডেস্ক
লর্ডস—ক্রিকেটের তীর্থভূমি। আর সেখানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গৌরবময় ইতিহাসের পৃষ্ঠায় আজ যুক্ত হলো আরও কয়েকটি উজ্জ্বল অধ্যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। শুধু দলের নয়, নিজের নামও তুলে নিয়েছেন রেকর্ডবইয়ের শীর্ষে।
দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম ভরসা ডেভিড বেডিংহামকে নিজের পঞ্চম শিকার বানিয়ে কামিন্স যখন উদযাপন করছিলেন, তখন লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। ২০০৮ সালে তিনিই ছিলেন সর্বশেষ অধিনায়ক যিনি এই মাঠে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ১৭ বছর পর ভেট্টোরির সেই কীর্তি ছাপিয়ে গেলেন কামিন্স—৬ উইকেট তুলে নিয়ে।
৩২ বছর বয়সী কামিন্স ২৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে গড়েছেন লর্ডসে অধিনায়ক হিসেবে ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪১ বছরের ইতিহাসে এই মাঠে কোনো অধিনায়ক এতটা সফল হননি বল হাতে। সেটাও আবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে।
কামিন্সের আগুনে বোলিংয়েই ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস। অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে ৭৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড। কিন্তু এরপর কামিন্সদের দলও পড়েছে বড়সড় পরীক্ষার মুখে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার উইকেট ভেঙেছে একের পর এক। ৭৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। উইকেটকিপার ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি ৪৩ রানের ইনিংস খেলে কিছুটা লড়াই চালান, মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়েন অষ্টম উইকেটে। কিন্তু দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৪৪ রান। ফলে দুই ইনিংস মিলিয়ে লিড দাঁড়ায় ২১৮ রানে।
দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন স্টার্ক ১৬ রান ও লায়ন ১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণও ছিল যথেষ্ট ধারালো। রাবাদা ও এনগিডি নিয়েছেন সমান ৩টি করে উইকেট। বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন ইয়ানসেন ও মুল্ডার।
প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিনে সমান ১৪টি করে উইকেট পড়েছে—এক নজিরবিহীন ভারসাম্য। দুই দলের বোলাররাই উইকেটের চরিত্র ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ব্যাটারদের জন্য দিনটা ছিল কঠিনতম পরীক্ষার।
লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট জয়ের স্মৃতি বহু পুরোনো—১৯৯৮ সালে একবারই তারা এখানে জিতেছিল। সেই বছরই তারা জিতেছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি নকআউট ট্রফি, যা এখন পর্যন্ত তাদের একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা। তবে এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১১৯ রান—যা লজ্জারই নামান্তর।
অস্ট্রেলিয়া তাদের লিডকে আরও বড় করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে থাকবে ইতিহাস ভাঙার চ্যালেঞ্জ। লর্ডসে নতুন ইতিহাস রচনার জন্য পেসারদের দাপট, ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য আর প্রতিপক্ষের ভুলের অপেক্ষায় এখন পুরো ক্রিকেটবিশ্ব।