বুটেক্স প্রতিনিধি
বর্তমান সময়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শুধু মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানই নয়, বরং একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করাও অত্যন্ত জরুরি। এই ব্র্যান্ডিং শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, কর্মসংস্থান এবং গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করে এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সম্মানজনক পরিচিতি গড়ে তোলে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরাও চান তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি লাভ করুক। তাঁদের দৃষ্টিতে, সঠিক পদক্ষেপ নিলে বুটেক্স হয়ে উঠতে পারে দেশের শিক্ষা এবং শিল্প খাতের একটি অন্যতম শক্তিশালী ব্র্যান্ড।
বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড পরিচিতিই ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থী, শিল্প-প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
সেই ভাবনা থেকেই তাঁদের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা যা তার মান ও সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিংয়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন বিডিটাইমের বুটেক্স প্রতিনিধি মোহাম্মদ তারেক
বুটেক্সের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নাজমুছ সাকিব বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে এদেশের টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্প। আর এই শিল্পকে তরান্বিত করতে প্রতিবছর দেশের সব থেকে চৌকস ও মেধাবি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি করতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়(বুটেক্স)।
তাই দেশীয় অর্থনীতির সামগ্রিক রূপরেখাকে এগিয়ে নিতে বুটেক্স ব্র্যান্ডিং একটি অতিপ্রয়োজনীয় চাহিদা বর্তমান সময়ে। শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধুমাত্র দেশে নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিতি এনে দেয় যা বুটেক্সের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অনুদান এবং সহযোগিতা আকর্ষণ করতে সাহায্য করে এবং বহির্বিশ্বে বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও চাকুরি পাবার সম্ভাবনাকেও বৃদ্ধি করে।
বুটেক্সের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য কার্যকর যে পদক্ষেপগুলো নেয়া যায়
তা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি আধুনিক ও তথ্যবহুল ওয়েবসাইট এবং সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা,শিক্ষা ও গবেষণায় মান উন্নয়ন এবং নতুন প্রোগ্রাম চালু করা। এছাড়াও সফল এলামনাইদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও তাদের সাফল্যকে ব্র্যান্ডের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও কনফারেন্সের মাধ্যমে বুটেক্সকে তুলে ধরা যেতে পারে।
৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ আশরাফুল হক রাইহানের মতে-
বুটেক্স ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজন সার্বিক চিন্তাধারা ও প্রাসঙ্গিক মানসিকতার পরিবর্তন। ঠিক এজন্যই আমি মনে করি যে, ‘বুটেক্স সংস্কার’ এর আলোচনা ব্যতীত ‘বুটেক্স ব্র্যান্ডিং’ নিয়ে যেকোনো আলোচনা সম্পূর্ণ বৃথা।
খুব সঙ্গত কারণেই বলতে হয় যে, ‘বুটেক্স ব্র্যান্ডিং’ নিয়ে এমন অনাগ্রহ এবং বেহাল দশার প্রধান কারণ একমাত্র বুটেক্সিয়ান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিজেরাই। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি ছোট হওয়া কিংবা সিস্টেমের ত্রুটি নিয়ে আমাদের কোনো হাত নেই, কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনার পরিধি বড় করা তো আমাদের হাতেই! বুটেক্সকে বিটাক কিংবা বেগুনবাড়ি না বলে ‘বুটেক্স’ বলার সম্পূর্ণ বিষয়টি আমাদের হাতেই।
এছাড়াও বুটেক্স ব্র্যান্ডিং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি আরো জানান,স্ট্রং এলামনাই নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং স্ট্রং স্টুডেন্ট-টিচার নেটওয়ার্ক হাব গঠন, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সাথে কোলাবোরেটিভ ব্রিজ, বিভিন্ন ধরনের ন্যাশনাল এবং গ্লোবাল ইভেন্ট অরগানাইজ হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
এছাড়াও একটি ইনোভেটিভ এনভায়রনমেন্ট তৈরির মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইনোভেটিভ মাইন্ডসেট বিল্ড আপ, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আরো বেশি পজিটিভ ইমেজ তৈরি করতে, আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কোলাবোরেটিভ নেটওয়ার্ক তৈরি, দেশের টেক্সটাইল সেক্টরসহ সকল সরকারি কিংবা আন্তর্জাতিক পলিসি মেকিং সিস্টেমের মধ্যে বুটেক্সিয়ানদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণে বুটেক্সের একটি গৌরবময় পরিচিতি খুজে পাওয়া সম্ভব।
একজন বুটেক্সিয়ান হিসেবে আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনার ধরন পরিবর্তন প্রয়োজন। মানসিকতার প্রসার ঘটাতে হবে সর্বোচ্চ। ছোটখাটো স্বার্থ বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণ বিবেচনা করে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে।
শত বাধাবিপত্তির মধ্যেও যেমন আমরা আমাদের জীবনে ক্ষুদ্র আশা নিয়ে এগিয়ে যাই, ঠিক তেমনিভাবে শত নেগেটিভিটির মধ্যেও খুঁজে নিতে হবে পজিটিভ জিনিসগুলোকে।
ক্রিয়েট করতে হবে পজিটিভ একটি এনভায়রনমেন্ট, তাহলে গতানুগতিকভাবে আর বুটেক্স ব্র্যান্ডিং করার প্রয়োজন পড়বে না, এমনিতেই হয়ে যাবে ‘বুটেক্স ব্র্যান্ডিং’ !
৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পিয়াল আহমেদের মতে, বুটেক্স বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালটির ব্র্যান্ডিংও হওয়া উচিত তেমনই যথাযথ মানসম্পন্ন।
এর ফলে যেমন শিক্ষার্থীদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রির মনোভাব চেঞ্জ হবে পাশাপাশি চাকরির বাজারেও আমরা একচ্ছত্র অধিপত্য দেখাতে পারবো। যথাযথ ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে বুটেক্সের মান ও টেকনোলজিক্যাল জ্ঞান বর্তমান শিক্ষার্থীদের সামনে ফুটে উঠবে। এক্ষেত্রে যথাযথ ব্র্যান্ডিং অনেকটাই ভূমিকা পালন করে।
বুটেক্সের ব্র্যান্ডিং নিয়ে অনেক ধরনের পদক্ষেপে নেওয়া যেতে পারে।
বর্তমান এই টেকনোলজিক্যাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট প্রথম বর্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য করা উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বাড়ার পাশাপাশি, তারা ভবিষ্যতে টেক্সটাইল সেক্টরকে আরো সামনে অগ্রসর করতে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
টেক্সটাইলের যে বিষয়গুলো বর্তমানে বেশি চাহিদা সম্পন্ন যেমন ন্যানোটেকনোলজিক্যাল বিষয়াদি, এগুলোতে বুটেক্স থেকেই ট্রেইন করা হলে ওই নির্দিষ্ট সেক্টর গুলোতে বুটেক্সিয়ান দের দখলে থেকে বুটেক্সের ব্র্যান্ডিং হতে সাহায্য করবে ।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সাফল্যগাথা মিডিয়াতে আরো বেশি প্রচার করার মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও টেকনোলজিক্যাল জ্ঞান কেই প্রাধান্য দিয়ে বুটেক্সের ব্র্যান্ডিং করা উচিত।
৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ শাহরিয়ার ইসলাম বলেন, বুটেক্সের একাডেমিক ও কারিকুলার কার্যক্রমের উচ্চমানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার করার পাশাপাশি কর্মমুখী ও দক্ষতা ভিত্তিক ট্রেনিংয়ের আয়োজন করলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি শিল্প প্রতিষ্ঠানের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটিভ থাকা এবং শিক্ষার্থীদের কাজ ও উদ্যোগ নিয়মিতভাবে প্রচার করা একটি ভালো স্ট্র্যাটেজি হতে পারে। এছাড়াও অ্যালামনাইদের সাফল্যের কাহিনী তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সেই সাথে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার, এবং ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করা জরুরি।আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সেমিনারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বুটেক্সের গবেষণামূলক কার্যক্রমগুলোকে বৈশ্বিক পর্যায়ে উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিতে, একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড পরিচিতি কেবল সুনামের প্রতীক নয় বরং ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় তাঁদের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি পাওয়ার স্বপ্নে তাঁদের এই চিন্তা এবং উদ্যোগ প্রমাণ করে যে তাঁরা কেবল বর্তমানের শিক্ষার্থীই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ গৌরবের অংশীদারও।
শিক্ষার্থীদের এই ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা হয়তো একদিন বুটেক্সকে বিশ্বমঞ্চে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাবে যা দেশ ও প্রতিষ্ঠানের গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।