বিডিটাইম ডেস্ক
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভায় বৃষ্টির পানি জমিয়ে রান্না করার সংস্কৃতি এখন ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বৃষ্টির পানি দিয়ে ভাত রান্না করলে তা হয় সুস্বাদু। সেই বিশ্বাস থেকে প্রায় প্রতিটি ঘরে প্লাস্টিক বা মাটির পাত্রে এই পানি জমিয়ে রাখা হয়। আর এই অভ্যাসই এখন ডেঙ্গুর প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত দুই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৬ জন। শুধু জুন মাসের ১ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত দাউদকান্দি উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৫ জন। যেখানে পুরো জেলায় সরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩০৪।
দাউদকান্দি পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘ডেঙ্গু হটস্পট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পৌরসভার সবজিকান্দি এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কীটতত্ত্ব বিভাগ জানায়, এই এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার পাত্রে বিপুল পরিমাণ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
জেলার কীটতত্ত্ববিদ আল ইমরান ভূঁইয়া বলেন, “আমরা গিয়ে দেখি—প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা হচ্ছে। সেসব পাত্রেই পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। বাইরের উৎস নয়, বরং ঘরের মধ্যেই ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে।”
দাউদকান্দি পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদোয়ান ইসলাম বলেন, “এভাবে পানি জমিয়ে রাখা বন্ধ না হলে ডেঙ্গু সংক্রমণ থামানো যাবে না। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব পাত্রের পানি ফেলে দিয়েছি। মানুষকে সচেতন করতে হবে।”
পৌর এলাকার সবজিকান্দির বাসিন্দা রোনা আক্তার বলেন, “আমরা জানতামই না এভাবে পানি জমিয়ে রাখলে ডেঙ্গুর মশা জন্মাতে পারে। কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ থেকে আগে কেউ সতর্ক করেনি।”
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, “গত ২৬ দিনে ১ হাজার ৮৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৫০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১১ জন। মৃতদের মধ্যে নারী-শিশু রয়েছে।”
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, অবিলম্বে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার এই অভ্যাস পরিত্যাগ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। পৌরসভার পাশাপাশি স্থানীয়দেরও নিজেদের ঘর ও আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে।