“অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনিয়াছিলে সূর্যের আহ্বান প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃষ্ণ, আদিপ্রাণ” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “বৃক্ষবন্দনা” কবিতায় বৃক্ষরাজিদের প্রাণের জাগরণে সর্বোচ্চ নিয়ামকের মর্যাদা দিয়েছেন।”তুমি বৃষ্ণ, আদিপ্রাণ” ধরলার বুকে গাছ গাছালির আগমণই এ পৃথিবীর ভূখন্ডকে করে তুলেছে প্রাণের উপযোগী।
কিন্তু সভ্যতার উন্নতির অগ্রযাত্রায় বৃক্ষনিধন যেন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। বেড়ে চলেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা। বাংলাদেশও এর কবল থেকে রেহাই পায় নি। দিনে দিনে বড় বড় দালান কোঠা, কল কারখানা যেমন বাড়ছে তেমনি কমছে পাছা গাছালির সংখ্যা।
এমনই যখন দেশের বাস্তবতা তখন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পসে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র।
উত্তরবঙ্গর তুলনামুলক নতুন এই ক্যাম্পাসের রং সবুজ। ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসে যেদিকেই নজর যায় সেদিকেই নানান ধরনের গাছের মেলা। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরে রোপন করা হয়েছে ৭০০ প্রজাতির প্রায় ৩৭ হাজার গাছ।
ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে লাল সবুজের সমাহার। পথের দুধারের জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ কৃষ্ণচূড়া গাছ। সম্পূর্ণ এপিল মে জুন জুড়ে রক্ত লাল বর্ণ নিয়ে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুল নজর কাড়ে সকলের। এই মনমুগ্ধকর সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে উক্ত পথের নাম দেওয়া হয়েছে কৃষ্ণচূড়া সড়ক।
কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও দেখা মেলে শিউলি, পলাশ, কাঠগোলাপ, বট, পাকুড়, জবার মত নানান পরিচিত গাছের। এছাড়াও দেখা মেলে নানা দুর্লভ, ঔষধি এবং সৌন্দর্যবর্ধক গাছেরও। বিলাতি গাব, মহুয়া, পুমুর, দইবোটা,জয়ত্রি, হৈমন্তী, জয়তুনের মত দুর্লভ গাছ দর্শনার্থীদের আকর্ষনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুন।
অসংখ্যা গাছের সমাহারে বেরোবি ক্যাম্পাস সারা বছরই কোনো না কোনো ফুলের সুবাসে মুখরিত থাকে।রজনিগন্ধা, মাধবীলতা, চেরি, পলাশ, লাল কাঞ্চন সোনালু এর মত হরেক রকম ফুলের চাদরে আচ্ছাদিত বেরোবি ক্যাম্পাস। বিভিন্ন রংয়ের এই ফুলের সৌন্দর্যর সাথে ছবি তোলার ধুম লেগে থাকে সারাবছর।
বেরোবি ক্যাম্পাসে বৃক্ষের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডালপালায় রয়েছে অসংখ্য পাখির আনাগোনা। পাখির কিচিরমিচিরে শুরু এবং শেষ হয় শিক্ষার্থীদের দিন। এ যেন দিজেন্দ্রনাথ দত্তর গানের চরণের প্রতিফলন,” তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে, পাখির ডাকে জেগে।” পাখিদের আশ্রয়ের পাশাপাশি মানুষেরও স্বস্তির জায়গা বেরোবি ক্যাম্পাস। গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদে ও গরমে যখন তিক্ত জনজীবন তখন বেরোবি ক্যাম্পাসে বয় শীতল বায়ু।প্রখর রোদের থেকে আশ্রয় মেলে গাছের শীতল ছায়ায়। সব মিলিয়ে এ যেন এক প্রাকৃতিক স্বপ্নরাজ্য।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কবলে পড়া পৃথিবীতে গাছ রোপন এখন একটি অতি-প্রয়োজনিয়তা। বেরোবি সেই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেই শুধু খ্যান্ত হয় নি বরং দিয়েছে গাছের পরিচর্যায় সর্বোচ্চ মনোযোগ। বৃক্ষরাজিদের দখলে থাকা এই ক্যাম্পাস, মানুষকে প্রকৃতির আরও কাছে টেনে আনে। কৃত্রিম যান্ত্রিকতার ভিড়ে মানুষেকে তার অস্তিত্বের সোপন প্রকৃতির কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায় বৃক্ষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবিহা আক্তার শ্রাবণী
শিক্ষার্থী:
লোক প্রশাসন বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর