বিডিটাইম ডেস্ক
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন চরম আস্থাহীনতার মুখে। গ্রাহকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ বাড়তে থাকায় মার্চ ২০২৪ মাসে হঠাৎ করে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধু মার্চেই ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তুলনায় যথাক্রমে ২২ হাজার ও ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক খাতে অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি, এবং কিছু ব্যাংকের ভঙ্গুর অবস্থান মানুষের আস্থা নষ্ট করছে। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, প্রয়োজনের সময় টাকা তুলতে না-ও পারতে পারেন। ফলে তারা এখনই ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন।
এদিকে কিছু বেসরকারি ব্যাংকের একীভূতকরণের ঘোষণা গ্রাহকদের মধ্যে আরও আতঙ্ক তৈরি করেছে। একই সময় রোজার মাসে নগদ টাকার অতিরিক্ত চাহিদাও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এই অনাস্থার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছাপাতে বাধ্য হচ্ছে। জানুয়ারিতে যেখানে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, মার্চে তা দাঁড়ায় ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। ফলে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মানুষের ব্যাংকের ওপর আস্থা হারানো বিপজ্জনক সংকেত। এতে বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থান সংকট এবং আর্থিক খাতের দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।”
এক ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আগে দুর্বল ব্যাংকের অবস্থা গোপন রাখা হতো। এখন তা প্রকাশ্যে চলে আসায় গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
ডিজিটাল লেনদেন কাঠামো এখনও দুর্বল। উপরন্তু, মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন লেনদেনে কর থাকার কারণে মানুষ এখনো নগদের ওপর নির্ভর করছে। এতে ছায়া অর্থনীতির বিস্তৃতি ঘটছে, যা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চাই ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা, দুর্বলতার সংস্কার এবং ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ সম্প্রসারণ। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি। তা না হলে ব্যাংকিং খাতের এই আস্থাহীনতা অর্থনীতির মেরুদণ্ডকেই ভেঙে দিতে পারে।