বিডিটাইম ডেস্ক :
ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা শুধু প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার পুরোনো শত্রুতা নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন ধরণের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই উত্তেজনার পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা—যা এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে আমূল পরিবর্তন করে দিচ্ছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়াকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। একদিকে ভারত ঐতিহাসিক নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক দৃঢ় করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান সামরিক নির্ভরতায় ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে ভারত রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানি ৫০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস করেছে। এর পরিবর্তে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে উন্নত সামরিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে। বর্তমানে ভারতের সেনাবাহিনী পশ্চিমা প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত আধুনিকীকরণের পথে রয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের ৮০ শতাংশেরও বেশি সামরিক সরঞ্জাম বর্তমানে চীন সরবরাহ করছে। এর মধ্যে রয়েছে J-10C যুদ্ধবিমান, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং চীনা রাডার সিস্টেম। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্ভরতা শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক প্রভাবের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক রুহুল আমিন বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের এই দুই ভিন্ন মেরুতে অবস্থান দক্ষিণ এশিয়াকে একটি নতুন ঠান্ডা লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা শুধু দ্বিপাক্ষিক বিরোধ নয়—এটা বড় পরাশক্তিদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধ।”
বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য এখন আর ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক নয়। দক্ষিণ এশিয়া হয়ে উঠছে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেখানে সেনা, অর্থনীতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে মতাদর্শের লড়াইও প্রবল হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সামরিক বিভাজন এবং প্রতিযোগিতা যদি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে ভবিষ্যতে অঞ্চলটি আরও অস্থিতিশীলতার মুখে পড়তে পারে।