Top 5 This Week

যবিপ্রবির উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় আপনাদের পাশে চাই: উপাচার্য

যবিপ্রবি প্রতিনিধি:

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেছেন, ‘যশোরের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস অতি প্রাচীন। আপনাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও চাওয়া-পাওয়ার ফসল হলো এ প্রাণের বিদ্যাপীঠ। বৃহত্তর যশোর জেলার সন্তান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আমি আপনাদের পাশে চাই।’

৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতিবিনিময় সভায় অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের প্রতি এ আহ্বান জানান।

সূচনা বক্তব্যে তিনি  ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদেরকে স্মরণ করেন।

একইসঙ্গে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মসিয়ূর রহমানসহ যাঁরা শহিদ হয়েছেন, যশোরের জননন্দিত নেতা মরহুম তরিকুল ইসলামসহ যাঁরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন ও উন্নয়নের সারথি হয়েছেন সে সকল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যানুরাগীসহ সবাইকে আজকের দিনে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

মতিবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার গবেষণার উন্নয়নের প্রকল্প চলমান।

এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিগুলো আরও উন্নত হবে এবং শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার, সিএসআরআইএল এর মতো কেন্দ্রীয় গবেষণারগুলোরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা ও ‘রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং আধুনিকীকরণ, পুরো ক্যাম্পাসে লাইটিংয়ের আওতায় আনা, পরিবহন সূচি শিক্ষার্থীবান্ধব করাসহ রাস্তাগুলো পুনঃনির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে আইইএলটিএস, টোয়েফেল, জিআরই, জিম্যাটসহ বিদেশি ভাষা কোর্সের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ক্লাব কেন্দ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

সেই সাথে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে দক্ষ মানবশক্তি তৈরির লক্ষ্যে আইসিএমএবি’র সাথে চুক্তির মাধ্যমে যবিপ্রবিতেও এ প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যবিপ্রবি পরিবারের সদস্যদের জন্য ডা. এম আর খান মেডিকেল সেন্টারের সেবার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) র‌্যাঙ্কিংয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে যবিপ্রবি সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে গুণগত গবেষণায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং ভালো করার জন্য বিভিন্ন পারফরম্যান্স সূচক যেমন: পাঠদান, গবেষণার পরিবেশ, ইন্ডাস্ট্রিতে সংযুক্তির বিষয়ে আরও গুরুত্বারোপ করা হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য ও শুভাকাক্সক্ষীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ যেন বিনষ্ট না হয়, সে জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেগুলোই গ্রহণ করবে।’

যবিপ্রবির আগামী দিনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বৃহত্তর যশোর হচ্ছে কৃষি প্রধান ও মৎস্য প্রধান অঞ্চল।

মৎস্যখাতের উন্নয়নে ইতিমধ্যে যবিপ্রবিতে একটি আধুনিক হ্যাচারি রয়েছে, যেখান থেকে মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়, যার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মৎস্য চাষীরা উপকৃত হচ্ছে। তবে কৃষিখাতের উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাগ্রো টেকনোলজি, এ্যাগ্রো বায়ো-টেকনোলজি, ন্যানো-টেকনোলজি বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

যা যশোরের কৃষি উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়া যুগের চাহিদা অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূর ভবিষ্যতে অ্যার্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ডাটা সায়েন্সসহ আধুনিক বিভিন্ন বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

আপনারা জানেন, যবিপ্রবির আয়তন মাত্র ৩৫ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপরিধি ও কলেবর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতো স্বল্প জায়গায় শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। নতুন দুটি আবাসিক হল চালু হয়েছে।

খুব অল্প সময়েই এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। ফলে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চাসহ ইতিবাচক কর্মকা-ে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও জায়গা প্রয়োজন। হবে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি প্রকল্পের আওতায় যবিপ্রবিতে একটি ১০-তলা বিশিষ্ট ভবন এই ক্যাম্পাসে নির্মিত হবে।

আধুনিক নতুন নতুন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল, খেলার মাঠের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে ক্যাম্পাসের আয়তন সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য আপনাদের মাধ্যমে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যবিপ্রবির ডিন অধ্যাপক ড. এইচ এম জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অধ্যাপক ড. মো. জাফিরুল ইসলাম, ড. মো. মনিবুর রহমান, ড. মো. কোরবান আলী, ড. মোহাম্মদ কামাল হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল আমিন, রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মতিবিনিময় সভায় সাংবাদিকবৃন্দ বিভিন্ন গঠনমূলক প্রশ্ন ও পরামর্শ দেন। যবিপ্রবির প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রশ্ন ও পরামর্শগুলো ইতিবাচক গ্রহণ করে ভবিষ্যতে তা কার্যকর করার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish