বিডিটাইম ডেস্ক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিদ্যমান সংবিধান লঙ্ঘন করে যে ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) মায়ানমারের জন্য তথাকথিত মানবিক করিডর দেওয়ার খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দল দুটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই।
বিবৃতিতে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই করিডর দেওয়া হলে বাংলাদেশের সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়বে।
এমনিতেই মায়ানমারের নাসাকা বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের বিজিবির নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে। এই করিডর মায়ানমার জান্তা বাংলাদেশের নিরাপত্তাকেও নানা অজুহাতে বিপন্ন করে তুলবে।
তারা আরো বলেন, হঠাৎ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর এই উৎসাহ সন্দেহজনক। এটি সাম্রাজ্যবাদের ভূ-রাজনৈতিক চক্রান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। কারণ, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো মানবিক করিডরের জন্য বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে মায়ানমারের সিতওয়ে বন্দর ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের মায়ানমার উপকূলের অনেক জায়গাই ব্যবহার করতে পারে।
সুতরাং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কথা বিবেচনায় না রেখে সরকার যদি এ ধরনের দেশবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নিলে দেশপ্রেমিক জনতা তা প্রতিহত করবে।
বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আন্তঃদেশীয় মানবিক করিডোরের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে কোন রকম আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল। কোন শর্তে করিডোর
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে কী মনোভাব? আরাকান আর্মির সাথে এ বিষয়ে কোন যোগাযোগ হয়েছে কী না? মায়ানমার সরকার বিষয়টি কীভাবে দেখবে? তাদের সাথে সরকারি পর্যায়ে কোন আলোচনা হয়েছে কী না? এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা জাতির সামনে পরিষ্কার করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার যেমন সাম্রাজ্যবাদী ভারতের স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছিল। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারও কি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে রাখাইনে মানবিক করিডোর দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে হুমকীতে ফেলে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের ক্রীড়নক হিসেবে বাংলাদেশকে গাজা বা ইউক্রেন বানাতে চাইছে?
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখতে চীনকে ঠেকানোর জন্য আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গোপসাগরের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হওয়ার খবর দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে আসছে। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য, বাংলাদেশের বান্দরবানসহ পার্বত্য অঞ্চল ও ভারতের মনিপুর, মিজোরামকে নিয়ে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠনের মার্কিন অভিলাসের কথা সর্বজন বিদিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীও বাংলাদেশ সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতে ‘আরাকানে স্বাধীন রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। সেই মুহূর্তে গোটা জাতিকে অন্ধকারে রেখে বাংলাদেশ সরকারের এই কথিত মানবিক করিডোর প্রদানের সিদ্ধান্ত মার্কিন এজেন্ডারই অংশ বলে দেশবাসী মনে করে।
কথিত মানবিক করিডোর প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।