Top 5 This Week

রোহিঙ্গা সংকটে জামায়াতের প্রস্তাব: কূটনীতি, বাস্তবতা ও বিপদের আভাস

Spread the love

বিডিটাইম ডেস্ক

বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে—এমন সংবাদ শুধু বিস্ময় নয়, কূটনৈতিকভাবে তা বাংলাদেশের জন্যও এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

যদিও পরে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এই বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন, ততক্ষণে ক্ষত তৈরি হয়ে গেছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাবকে তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা জামায়াতকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অভিযোগও তুলেছে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট একটি নতুন জটিলতায় প্রবেশ করলো।

জান্তা সরকার এ সুযোগে তাদের পুরোনো বক্তব্যই পুনর্ব্যক্ত করেছে—রোহিঙ্গারা আসলে ‘বাঙালি শরণার্থী’। যদিও জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং ইতিহাস প্রবাহ সবাই জানে, রোহিঙ্গারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাখাইনেই বসবাস করে এসেছে। তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং জাতিগত নিধনের শিকার করার দায় মিয়ানমার সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। অথচ জামায়াতের প্রস্তাব এই বিতর্কিত দাবিকে যেন নতুন শক্তি জুগিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বহু কষ্টে একটি জটিল ও মানবিক সংকটকে আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরে বিশ্বের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে। সেখানে একটি রাজনৈতিক দলের একতরফা প্রস্তাব পুরো কূটনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করতে পারে। চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার সূক্ষ্মতা—সবকিছু এতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

প্রশ্ন হলো, জামায়াত কেন এমন প্রস্তাব করলো? যদি তারা সত্যিই রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে থাকে, তবে তা রাষ্ট্রীয় অবস্থান বা আন্তর্জাতিক সমর্থনের সঙ্গে সমন্বয় না করে এমন একতরফা উদ্যোগ কি আদৌ সহায়ক? নাকি এটি শুধুই রাজনৈতিক অস্তিত্ব জানান দেওয়ার প্রয়াস?

জান্তা সরকারের বক্তব্যে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে—চীনের কুনমিংয়ে নিয়মিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রতিরক্ষা পর্যায়ের বৈঠক হয় এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমার পরিচয় যাচাই, নিবন্ধন ও আবাসনের পরিকল্পনা করছে। অর্থাৎ, ধীরে হলেও একটি প্রক্রিয়া চলছে। ঠিক সেই সময় এমন এক “স্বাধীন রাষ্ট্র” প্রস্তাব আসা গোটা প্রক্রিয়াটিকে অকার্যকর ও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রোহিঙ্গা সংকট একটি মানবিক বিপর্যয়, যার সমাধান প্রয়োজন যৌথ রাষ্ট্রীয় কূটনীতির, রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার নয়। জামায়াতের প্রস্তাব যে জান্তা সরকারকে নতুন করে আক্রমণের ভাষা দিয়েছে, সেটা এখন স্পষ্ট। এমনকি এর ফলে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের অবস্থান আরও বিপন্ন হতে পারে—তাদের ওপর দমন-পীড়ন বাড়াতে পারে জান্তা বাহিনী, “বিদেশি ষড়যন্ত্রের” অভিযোগ তুলে।

এই প্রস্তাবের মাধ্যমে জামায়াত নিজেদের রাজনৈতিক উপস্থিতি জানান দিতে চেয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত স্বার্থ কতটা রক্ষা হলো, বা বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান কতটা শক্তিশালী হলো—তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এখন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish