বিডিটাইম ডেস্ক
ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছে পরিবার ও তাঁর সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নদীতে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা, নাকি হত্যাকাণ্ড—এই প্রশ্ন ঘিরেই ঘনীভূত হচ্ছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
গত ১৭ জুন ভোলা থেকে ঢাকাগামী একটি লঞ্চ থেকে সুকর্ণা আক্তার মেঘনা নদীতে পড়ে যান। তিন দিন পর, ২০ জুন লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় নদীর তীরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরিচয় না মেলায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনও করা হয়। পরে ২৩ জুন তাঁর বাবা মাসুদ রানা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
সুকর্ণার মা ইয়ানুর বেগম বলেন,”আমার মেয়ে নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, নাকি ধর্ষণের পর হত্যা—আমরা কিছুই জানি না। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক।”
সুকর্ণা ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের একজন সক্রিয় নেত্রী ছিলেন এবং কলেজ ছাত্রদল কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ফরম জমা দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মন্তব্য ও গুজব ছড়ালে গতকাল কলেজে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ফজলুল করীম, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর হোসেন, সভাপতি প্রার্থী আরাফাত ইসলাম ইপ্তি, নির্বাহী সদস্য আবদুস সামাদসহ অনেকে বলেন,
“আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চাই। একজন নেত্রী এমনভাবে নিখোঁজ হয়ে মারা গেলে প্রশাসনের দায় এড়ানো উচিত নয়।”
আসামির তালিকায় সামাজিক মাধ্যমে নাম আসা নিয়ে আরাফাত ইপ্তি বলেন,”আমি সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। সুকর্ণার মৃত্যুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ইতিমধ্যে ভোলা সদর মডেল থানায় আমি জিডি করেছি।”
জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “সুকর্ণা আমাদের সংগঠনের নেত্রী ছিলেন। একটি মহল পারিবারিক বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে ঘোলাটে করতে চাইছে। আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
লাশ উদ্ধারের পর ২১ জুন নৌ পুলিশ লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করে। ২৩ জুন সুকর্ণার বাবা থানায় পৃথকভাবে অভিযোগ জমা দেন। দুটি অভিযোগেই কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ভোলা সদর থানার ওসি আবু শাহাদৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান,”সুকর্ণার নিখোঁজের বিষয়ে তাঁর বাবা ২০ জুন জিডি করেছিলেন। বিষয়টি আমরা লক্ষ্মীপুর থানাকে অবহিত করেছি এবং তদন্তে সহায়তা করছি।”
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি আবদুল মোন্নাফ বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা মঙ্গলবার ভোলার ইলিশা ঘাটে গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় মন্তব্য করা যাচ্ছে না।”
সুকর্ণার মৃত্যু আত্মহত্যা, না পরিকল্পিত হত্যা—এটি এখনো অজানা। পরিবার, রাজনৈতিক সংগঠন এবং সচেতন মহল সকলেই চাইছেন, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। তদন্তের দিকে এখন সবার দৃষ্টি।