বিডিটাইম ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার যুবক ইমরান হোসেন (২৬)।
কিন্তু আহতের সরকারি তালিকায় নাম না ওঠায় কোনো ধরনের সহায়তা বা চিকিৎসা পাননি তিনি। দীর্ঘদিন যন্ত্রণা সহ্য করে অবশেষে শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে মারা গেলেন এই আন্দোলনকারী।
আজ শনিবার (১৪ জুন) নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোহনপুর গ্রামে তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
ইমরান গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় স্ত্রী ও দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন। সাত বছর ধরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করছিলেন। ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হন তিনি। গুলি লাগে তাঁর বুক, পিঠ ও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায়।
আহত হওয়ার পর স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে ভয়ে গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি। এরপর থেকে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। শরীর থেকে বেশ কিছু ছররা গুলি বের করলেও ব্যথা পিছু ছাড়েনি। স্ত্রী রিতা আক্তার জানান, টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি তাঁরা।
ইমরানের পরিবার জানায়, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে সমস্যা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় তিনি নিজের নাম সরকারি তালিকায় তোলেননি, কাউকে কিছু বলেনওনি। স্ত্রী বলেন, “তাঁর সঙ্গে যাঁরা আহত হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই সরকারি তালিকায় থেকে সাহায্য পেয়েছেন, চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু আমার স্বামীর খোঁজ কেউ নেয়নি।”
গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করলে ইমরানকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
“একজন নিঃশব্দ শহীদ”
শনিবার ইমরানের গ্রামের বাড়িতে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম। তিনি বলেন, “ইমরান আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল—এটা তাঁর চিকিৎসা নথি দেখে নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু তাঁর নাম কোথাও নেই। আমরা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
ময়মনসিংহ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. আলী হোসেন বলেন, “ইমরান যে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, তার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। একজন নিঃশব্দ শহীদ হারিয়ে গেল। এটা শুধু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটা রাষ্ট্রীয় অবহেলার একটি নির্মম উদাহরণ।”
প্রশাসনের বক্তব্য
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান জানান, “ইমরান কোথাও তালিকাভুক্ত ছিলেন না। তবে চিকিৎসা নথি দেখে নিশ্চিত হয়েছি তিনি আন্দোলনে আহত হয়েছিলেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।”
প্রান্তিক যোদ্ধাদের উপেক্ষা
ইমরানের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক আর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই তাঁকে “জুলাইযোদ্ধা শহীদ” হিসেবে অভিহিত করে লেখেন, ‘একজন গুলিবিদ্ধ তরুণ, যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন, আজ বিনা চিকিৎসায় মরলেন—এটা শুধু একজনের মৃত্যু নয়, এটা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।’