Top 5 This Week

নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে নতুন করে উত্তপ্ত রাজনীতি

বিডিটাইম ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি জানান, নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বর কিংবা সর্বোচ্চ আগামী জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়েছে, আর সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা।

বিএনপি বরাবরই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে আসছে। দলটির নেতা মির্জা আব্বাস প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “ড. ইউনূস জাপানে বসে বিএনপির বদনাম করেছেন, এতে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের সময় বাড়িয়ে জুনে নেওয়ার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে, যা দেশের অখণ্ডতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোরও দাবি, ডিসেম্বরেই নির্বাচন দিতে হবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। দুই-একটি দল ছাড়া সবাই ডিসেম্বরের নির্বাচনের পক্ষে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বিদেশে বসে কেন এই বক্তব্য দিতে হলো? জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর ব্যাখ্যাও পরিষ্কার নয়।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “সরকারই বলেছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বর বা জুনে, অথচ সব দল বলছে ডিসেম্বরেই হোক। এর ব্যতিক্রম হলে সরকারের উচিত এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া।”

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “নির্বাচন হতে হবে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে। শুধু নির্বাচন করলেই হবে না, স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার করাও জরুরি।”

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, তারা রমজানের পর নির্বাচন চেয়েছেন। বিএনপি ডিসেম্বরের কথা বলছে। তবে তিনি মনে করেন, “নির্বাচন যত দ্রুত হয়, তত ভালো। আগে হলেও ভালো, পরে হলেও সমস্যা নেই।”

এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, “নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।”

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ হলে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। তবে সময় টেনে নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় তারা। তবে, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য এবং তারপরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়ার পর দেশের রাজনীতি নতুন করে অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একদিকে যেমন নির্বাচনের সময় নিয়ে দ্বিধা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

সবার নজর এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে, যা হয়ত আগামী নির্বাচনের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish