Top 5 This Week

রাজশাহীতে দুই ছাত্র হত্যার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও বিচার পাননি নিহতদের পরিবার

রাজশাহী প্রতিনিধি

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজশাহীতে সহিংস ঘটনায় প্রাণ হারান রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম। আজ সেই ঘটনার ১০ মাস পার হলেও নিহতদের পরিবার এখনও বিচার পাননি। কেবল শোক, হতাশা আর প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে দিন পার করছেন তাঁরা।

সেদিন রাজশাহীর রাজপথে চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। উত্তপ্ত নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাকিব আনজুম। আর মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান। পরে ৮ আগস্ট তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সাকিব আনজুমের তালাইমারী এলাকার বাসায় গেলে দেখা যায়, আজও ভারী নীরবতায় মোড়ানো ঘর। ছেলে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা মাইনুল হক ও মা রোকেয়া খাতুন। মাইনুল হক বলেন, “ছেলেটা ডাক্তার হতে চেয়েছিল। খুব মেধাবী ছিল। ও চলে যাওয়ার পর জীবন আর আগের মতো নেই। মামলা হয়েছে, কিন্তু বিচার হচ্ছে না। সবাই শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে।”

অন্যদিকে পুঠিয়ার মঙ্গলপাড়া গ্রামের কৃষক মোসলেম আলী এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না যে তাঁর বড় ছেলে আলী রায়হান আর ফিরে আসবে না। তিনি বলেন, “ছেলেটা বলত, চাকরি পেলেই আমাদের শহরে নিয়ে যাবে, আমাকে হজে পাঠাবে। এখন স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে গেছে।”

আলী রায়হানের ছোট ভাই রানা ইসলাম বলেন, “আমরা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কিন্তু তদন্ত যদি না এগোয়, তাহলে বিচার কীভাবে হবে?”

দুই পরিবারের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের মামলা হলেও তেমন অগ্রগতি নেই। তদন্তও শেষ হয়নি। আসামিদের অনেকেই এখনও ধরা পড়েনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, “দুটি মামলারই তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। সাকিব আনজুম হত্যা মামলায় ৪২ জন এবং আলী রায়হান হত্যা মামলায় ৫০ জনের নাম এজাহারে রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে আরও আসামিদের যুক্ত করা হবে।”

তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও না এসেছে চার্জশিট, না শুরু হয়েছে বিচার। ফলে নিহতদের স্বজনদের মাঝে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশাও ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish