Top 5 This Week

কুবি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা, সাংবাদিকসহ আহত ২০

Spread the love

কুবি প্রতিনিধি,

সারাদেশের চলমান কোটা আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে পুলিশ। এতে চারজন সাংবাদিক সহ অন্তত ২০ জন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল  বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশ্যে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্সার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় পুলিশ ও ডিবির প্রায় শতাধিক সদস্য শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে গেলে প্রথমে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর আবাসিক হল ও মেসের প্রায় সাত-আটশ শিক্ষার্থী এসে যুক্ত হয়ে পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। এরপর শর্টগান দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যা কিছুক্ষণ পর তুমুল সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পুলিশের আঘাতে আমাদের সময়ের সংবাদদাতা অনন মজুমদার, দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা মানছুর আলম অন্তর, চ্যানেল আইয়ের সৌরভ সিদ্দিকী সহ আহত শিক্ষার্থীদের  এম্বুলেন্স করে কুমিল্লা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আন্দোলনে পুলিশি বাধায় শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার পর আন্দোলনে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে এসে জড়ো হয়। পরে তাঁরা ধিক্কার ধিক্কার প্রশাসন ধিক্কার, প্রক্টরের চামড়া তুলে নিব আমরা, আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই সহ নানা স্লোগান দিয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থী ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান করেন।
পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বলেন, কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড অবরোধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে আসার এক পর্যায়ে পুলিশ বেরিগেড দেয় আমরা কয়জন বেরিগেড ভেদ প্রবেশ করলে পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করলে আমি পড়ে যায়, ঐ অবস্থায় পুলিশ আমার উপর লাথি মারে। আমাকে ৫ টা বাড়ি মারে। আমি দৌড় দিলেও পুলিশ পিছন থেকে মারতে থাকে।
২০-২১ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের আহত শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বরোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম তখন পুলিশ আমাদের বাঁধা দেয় এবং এক পর্যায়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা শুরু করে।
মামুনুর রশিদ,সেশন ২০২০-২১, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের  আরেক আহত শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন একপর্যায়ে পুলিশ আমাদের বাধা আমরা যখন বাধা ডিঙিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম তখন পুলিশ লাঠি চার্জ করলে আমরা পিছিয়ে আসি। লাঠিচার্জ করলে বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী পুলিশের উপর হামলা করে এতে পুলিশ লাঠি চার্জ, টিয়ার শেল ছুটে। তখন অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়। গুরুতর আহত হয় ৮-৯ জন শিক্ষার্থী।’
এবিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সার্কেলের অতিরিক্ত এএসপি এমরানুল হক মারুফ বলেন, প্রতিদিন এভাবে রাস্তা ব্লক করে রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা আজ শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এবিষয়ে আমরা পরে ব্যবস্থা নিবো।  এবিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সার্কেলের অতিরিক্ত এএসপি এমরানুল হক মারুফ বলেন, প্রতিদিন এভাবে রাস্তা ব্লক করে রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা আজ শিক্ষার্থীদের বাঁধা দিতে আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এবিষয়ে আমরা পরে ব্যবস্থা নিবো।
কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কিছু টিয়ারসেল ও ১০ রাউন্ড ফাকা গুলি করেছে পুলিশ। ছাত্রদের ইটপাথরের আঘাতে দশ পনেরো জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আজ থেকে ছাত্রদের রাস্তায় উঠতে দেয়া হবে না। সড়কে যান চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে এবিষয়ে  নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ড. রনি বলেন, আমাদের এইখানে সর্বমোট ৯ জন আহত অবস্থায় এসেছে। এর মধ্যে ৭ জনকে এডমিশন দেওয়া লাগছে এবং ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। ৭ জনের অবস্থাও অতটা খারাপ নয়, তারাও মোটামুটি ভালো আছে। আগামী ২৪ ঘন্টা আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে।
প্রক্টর ভারপ্রাপ্ত কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, পুলিশের যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো। এখানে আমার কোন ইন্ধন নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish