বিডিটাইম ডেস্ক
ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সংঘর্ষের জেরে টানা তৃতীয় দিনেও (শুক্রবার) চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতা, হামলার শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা এই অচলাবস্থার মূল কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতালে ফিরতে পারছেন না। অনেকে আশঙ্কা করছেন, আহতদের পক্ষ থেকে বাসাবাড়িতে হামলার পরিকল্পনা চলছে—এমন গুঞ্জনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসকেরা।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীর কক্ষে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৯ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে গেলে সেখানেও হামলার অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনার জেরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাধারণ অনেক রোগী অন্যত্র চলে গেছেন। তবে আহত তরুণদের কেউ হাসপাতাল ত্যাগ করেননি। শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। ফলোআপ কিংবা নতুন রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়ার কলেজ শিক্ষার্থী গাউসুল আজম এক চোখ হারিয়েছেন, আরেক চোখের সমস্যায় তিনি বৃহস্পতিবার হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু সেবাবঞ্চিত হয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, “এই হাসপাতালের বিকল্প নেই। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হোক, এটাই চাই।”
আরেক আহত, কোরবান হোসাইন জানান, তাঁর এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অন্য চোখেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বুধবারের হামলায় তাঁর হাত ভেঙে গেছে। তিন দিন ধরে কোনো ওষুধ বা খাবার পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, হাসপাতালের কর্মচারী ও চিকিৎসকরা সিন্ডিকেট চালাতে পারছেন না বলেই আহতদের বের করে দিতে চাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের মো. কাউসার আহাম্মেদ সম্প্রতি এখানে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। ফলোআপের জন্য এসে চিকিৎসা বন্ধ দেখে বিপাকে পড়েছেন তিনি। বলেন, “চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি। চিকিৎসা না পেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।”
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, “হাসপাতাল এখন বন্ধ। চিকিৎসক ও কর্মচারীরা কেউ আসছেন না। কবে সেবা চালু হবে, বলা যাচ্ছে না। ভেতরে কারা আছে, সেটাও আমার জানা নেই।”
বুধবারের ঘটনার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সহকারী আনসার কমান্ডার অমৃত বালা বলেন, “পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসক-কর্মচারীরা কবে আসবেন, জানা নেই।”
প্রসঙ্গত, ২৫ মে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে চার আহত তরুণ বিষপান করেন। পরে, ২৮ মে তাঁরা পরিচালকের ওপর পেট্রল ও কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এরপর ২৯ মে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
এসব ঘটনার পর অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ পরিচালকের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাঁকে সাত দিনের ছুটিতে পাঠিয়ে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব দেন ডা. জানে আলমকে।
চিকিৎসাসেবা কখন স্বাভাবিক হবে—তা কেউই বলতে পারছেন না। ফলে চোখের চিকিৎসার জন্য নির্ভরশীল এই বিশেষায়িত হাসপাতালের অচলাবস্থা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন হাজারো রোগী।