Top 5 This Week

১৫ বছরে গুমের ভয়াবহতার চিত্র উন্মোচিত

বিডিটাইম ডেস্ক

১৯ বছর বয়সী এক তরুণের বর্ণনায়, ২০১৭ সালে র‌্যাবের হাতে গুম হয়ে নির্যাতনের নির্মমতার চিত্র উঠে এসেছে। তিনি জানান, কিভাবে তাঁকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চিত করে শোয়ানো হয়েছিল, বাঁশ ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়, এবং মুখের ওপর কাপড় দিয়ে পানি ঢালা হয়। নির্যাতনের সময় তিনি মনে করেছিলেন, শ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যাবেন।

এই জবানবন্দি গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কমিশন জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দেশের ৩৬ জেলায় গুমের ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে।

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন এই প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কমিশন এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ পেয়েছে, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভয়াবহ ঘটনাগুলো আমাদেরই সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’ করেছে। এগুলো তুলে ধরার জন্য একটি হরর মিউজিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে।’ তিনি কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা ভয়ভীতি ও হুমকি সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে মানুষের অধিকার রক্ষায় অনুপ্রেরণা হবে।’

কমিশনের তথ্য মতে, গুমের ঘটনাগুলোর ‘মেইন কালপ্রিট’ বা মূল কিলার ফোর্স ছিল র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা। গুমের ঘটনায় জড়িত অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য সরকারি পদক ও পুরস্কারের আশায় এসব অপরাধ করেছিল।

তদন্তে দেখা গেছে, পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সিটিটিসিসহ সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গুমের ঘটনায় সর্বাধিক ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক সংস্থার যৌথ অভিযানও চালানো হয়েছে।

কমিশনের তথ্য অনুসারে, ১ হাজার ৮৩৭টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৪২৭ জন ফিরে এসেছেন, কিন্তু ৩৪৫ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের পরিবারের জন্য ব্যাংক লেনদেনসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

গুমের শিকারদের মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেছেন। বিএনপি, জামায়াত-শিবির, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য ও সমর্থকরা এই গুমের শিকার হয়েছেন। গুমের পর অনেককেই ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে পরিচয় করানো হয়েছে।

গুমের ঘটনা দেশের অর্ধেক জেলা জুড়ে ঘটেছে। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা হয়েছে। গুমের শিকারদের অধিকাংশই ১৯ থেকে ৩৫ বছরের যুবক ছিলেন। কমপক্ষে ১০ জন ১৮ বছরের কম বয়সী ছিলেন গুমের সময়।

গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ভুক্তভোগী এক দিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে আটকে রাখা হয়েছে। কিছু ব্যক্তি মাস থেকে বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

এই প্রতিবেদন দেশের গুমের ইতিহাসের একটি কঠিন অধ্যায় তুলে ধরে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish