Top 5 This Week

মন্দ ঋণে ডুবছে ব্যাংক; সুদ স্থগিত হয়ে আটকে পড়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা

Spread the love

বিডিটাইম ডেস্ক

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিতরণ হওয়া নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঋণ এখন দ্রুত মন্দমানে রূপ নিচ্ছে, যার ফলে দেশের ব্যাংক খাতে স্থগিত সুদ আকারে আটকে পড়েছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল গত এক বছরেই এই স্থগিত সুদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু ব্যাংকের আয়ক্ষেত্রেই চাপ সৃষ্টি করছে না, বরং প্রভিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে বিনিয়োগ সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ঋণ এখন খেলাপি, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মন্দ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত — অর্থাৎ এসব ঋণ আদায়-অযোগ্য ধরা হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো যে সুদ আয় করতে পারতো, তার একটি বড় অংশই এখন স্থগিত হিসেবে জমে আছে — যার পরিমাণ প্রায় ৭৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা অনুসারে, খেলাপি ঋণ তিনটি স্তরে ভাগ হয়: নিম্নমান (৩–৬ মাস), সন্দেহজনক (৬–১২ মাস), ও মন্দমান (১২ মাসের বেশি)। প্রতিটি স্তরের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হয় যথাক্রমে ২০, ৫০ এবং ১০০ শতাংশ। এসব প্রভিশন রাখতে হয় ব্যাংকের আয়ের অংশ থেকেই, ফলে আয় কমে যাওয়ায় প্রভিশনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে অনেক ব্যাংকে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে কোনো ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকায়। এই ঋণের বিপরীতে স্থগিত সুদের পরিমাণ ৪১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা — এক বছরে বেড়েছে ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা, এর বিপরীতে স্থগিত সুদ ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এক বছরে তাদের স্থগিত সুদ বেড়েছে ৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা।

বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যেখানে স্থগিত সুদ ৪০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ কোটি টাকা কম। একইভাবে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, যার বিপরীতে স্থগিত সুদ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা — গত বছর যা ছিল ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “ব্যাংকগুলো তাদের সুদ আয় খাতে নিতে পারে না যতক্ষণ না মন্দ ঋণ আদায় হয়। ফলে এই স্থগিত সুদ ব্যাংকের কাগজে আয় হলেও বাস্তবে তা অর্থপ্রবাহে পরিণত হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “এই বিধিনিষেধ আমানতকারীদের স্বার্থে আরোপ করা হয়েছে, না হলে ব্যাংকগুলো আদায় ছাড়াই কাগুজে আয় দেখিয়ে লভ্যাংশ বিতরণ করত।”

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই মন্দ ঋণ ও স্থগিত সুদের পরিস্থিতি ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। প্রয়োজন কঠোর নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish