Top 5 This Week

পরকীয়া আর পারিবারিক দ্বন্দ্বে নিহত পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন

Spread the love

বিডিটাইম ডেস্ক

স্ত্রীর প্রেমে বাঁধা দেওয়ার কারণে নিজ ঘরে নির্মমভাবে খুন হন হুমায়ুন কবীর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল হুমায়ুন কবীর (৪৫)। স্ত্রী সালমা বেগমের (৩৫) নেতৃত্বে দেড় মাস ধরে চলা পরিকল্পনায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করার পর ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। শুধু পারিবারিক কলহ নয়, স্ত্রীর এক আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এই হত্যাকাণ্ডের সূচনা হয়।

পুলিশ ও মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৭ এপ্রিল রাতে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে ভাড়া বাসায় ঘটেছে মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ড। খুনের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, একজন এখনও পলাতক।
দেড় মাস আগে থেকে স্বামীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন সালমা বেগম। এ সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করেন তাঁর আত্মীয় রাজীব হোসেন ও মরিয়ম বেগম। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেনা হয় একটি দা, কিছু রশি ও ঘুমের বড়ি। এরপর দুই লাখ টাকায় ভাড়া করা হয় তিন খুনি—ফজলে রাব্বি শুভ (২৩), রাফি খান (১৮) ও পলি বেগম (৩৫)।
ঘুমের ওষুধ কেনা হয় যাত্রাবাড়ীর একটি ফার্মেসি থেকে। ওষুধগুলো গুঁড়ো করে মিশিয়ে রাখা হয় ভাতের সঙ্গে। হত্যার আগের বৈঠক হয় মরিয়মের বাসায়।

২৭ এপ্রিল রাতে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন

ঘটনার দিন রাতে অফিস শেষে বাসায় ফেরেন হুমায়ুন কবীর। সালমা বেগম তাঁকে ঘুমের ওষুধ মেশানো ভাত খেতে দেন এবং পরে খাওয়ান আঙুর। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে হুমায়ুন অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন এবং শোবার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে ফজলে রাব্বি, রাফি ও পলি মরিয়মের বাসা থেকে নিচে নামেন এবং সালমার কক্ষে প্রবেশ করেন।

সালমা নিজের হাতে গামছা দিয়ে স্বামীর হাত ও পা বেঁধে দেন। এরপর ফজলে রাব্বি ও রাফি গ্লাভস পরে হুমায়ুনের গলায় রশি পেঁচিয়ে টান দেন। পাশে হুমায়ুনের দুই সন্তান ঘুমিয়ে ছিল।

হত্যার পর মরদেহ নিচে নামিয়ে বাইরে ফেলার চেষ্টা করে খুনিরা। তবে আশপাশে লোকজনের আনাগোনা শুরু হলে মরদেহ আর সরাতে পারেনি। পরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

পরকীয়া ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই মূল কারণ

তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, সালমা বেগমের সঙ্গে তাঁর আত্মীয় রাজীব হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি হুমায়ুন জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন এবং পারিবারিক বৈঠকের আয়োজন করেন। ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে সালমা সম্পর্ক ছিন্ন করার অঙ্গীকার করলেও মনের ভেতর ক্ষোভ পোষণ করতে থাকেন।

হুমায়ুনের ভাই খোকন হাওলাদার বলেন, “আমার ভাই সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার ভাইয়ের স্ত্রী-ই তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে মিলে এমন নৃশংসতা করল—যা ভাবা যায় না।”

ফকির দেখানো, মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ

সালমা বেগমের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি দাবি করেন, হুমায়ুনের ব্যবহার খারাপ ছিল। এজন্য এক ফকিরকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেখান স্বামীকে, যাতে তাঁর আচরণে পরিবর্তন আসে। এই টাকাও দেন রাজীব হোসেন। কিন্তু কিছুতেই হুমায়ুনের আচরণে পরিবর্তন আসেনি বলে জানান তিনি।

এরপর স্বামীকে “অত্যাচারী” আখ্যা দিয়ে মরিয়ম ও রাজীবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং খুনের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সালমা বেগম, মরিয়ম বেগম, পলি বেগম, ফজলে রাব্বি ও রাফি খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজীব হোসেন এখনও পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন।

বাবার না থাকা আর মায়ের গ্রেফতারে অসহায় অবস্থায় আছেন সন্তানরা। হুমায়ুন কবীরের দুই সন্তান বর্তমানে পটুয়াখালীতে তাঁদের চাচা খোকন হাওলাদারের বাসায় রয়েছে। “আমার ভাইয়ের সংসারটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তাঁর দুই সন্তান এত বড় একটা ট্র্যাজেডি দেখেছে খুব ছোট বয়সে। এই ঘটনার বিচার না হলে সমাজে এই বার্তাই যাবে—পরকীয়া করে খুন করলেও শাস্তি হয় না,” বলেন খোকন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish