বিডিটাইম ডেস্ক
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আকস্মিক চার দিনের সীমান্ত সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও দুই পক্ষের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবি–বিবাদ এখনো মীমাংসিত হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে—পাকিস্তানের করা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি, যা নতুন করে দুই দেশের মধ্যে ‘তথ্যযুদ্ধ’ শুরু করেছে। পাকিস্তানের পক্ষে উত্থাপিত এ দাবির নানা দিক খতিয়ে দেখেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
সংঘাতের সূচনা
৭ মে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সরাসরি সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়। ভারত সেদিন পাকিস্তান এবং পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ছয়টি শহরের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতের ভাষ্য, এই হামলা ছিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় পরদিনই এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ দাবি করেন, পাকিস্তানি প্রতিরক্ষাবাহিনী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এসব বিমানের মধ্যে ছিল—তিনটি রাফাল, একটি মিগ-২৯ ও একটি সুখোই সু-৩০। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, ভূপাতিত বিমানগুলোর ইলেকট্রনিক সিগন্যাল, ধ্বংসাবশেষের অবস্থান এবং সময়সীমা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই লড়াইয়ে ভারতের পক্ষ থেকে ৬০টি যুদ্ধবিমান এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ৪২টি বিমান অংশ নিয়েছে বলে জানানো হয়।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমাদের বাহিনী কেবল সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেই হামলা চালিয়েছে।” ভারত এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করেনি। ভারতের বিমান বাহিনীর ডিজি এ কে ভারতী বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি স্বাভাবিক, তবে বিস্তারিত এখনই জানানো উচিত নয়।”
এনিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিষয়টি ঘিরে নানা তথ্য প্রকাশ করেছে। রয়টার্স ও সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত দুটি যুদ্ধবিমান ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে। ফরাসি একটি সূত্রও একটি রাফালের ধ্বংসের কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মাইকেল ক্লার্ক মনে করেন, “ভারতের রাফাল ভূপাতিত হয়ে থাকলে তা ভারতের জন্য কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর।”
তিনি বলেন, “নিজ ভূমিতে বিমান ভূপাতিত হয়ে থাকলে ভারত নিশ্চয় সেটিকে গুজব হিসেবে উপস্থাপন করতেই চাইবে।”
পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় হামলায় তাদের ৫১ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভারত দাবি করেছে, তারা হারিয়েছে ৫ সেনা ও ১৬ বেসামরিক নাগরিক।
তথ্যপ্রমাণের অভাবে এবং রাজনৈতিক কূটচালে সত্যতা কতদূর স্পষ্ট হবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। তবে যেকোনো ভবিষ্যৎ সংঘাতে এই দাবিগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।