সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে ৩০ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, একই দলের এক নেতাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ সাজিয়ে জবরদখল করা হয়েছে পরিবারিক সম্পত্তি, বদলে দেওয়া হয়েছে বহুতল মার্কেটের নামফলকও।
সোমবার (৩০ জুন) সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী সিলেট মহানগর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য তাজুল ইসলাম টিপুর মা সোনারা বেগম।
তাঁর অভিযোগ, তাঁর স্বামী মরহুম মো. আফরোজ বক্সের নামে থাকা দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা মৌজার ৮৪ শতক জমি তাঁরা বিগত ৩৫ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছেন। ওই জমিতে ‘আফরোজ ম্যানশন’ নামে একটি বহুতল মার্কেট রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় হয়ে থাকে।
তাঁর দাবি, গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে বিএনপিরই সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবং মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ ওই সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নেন। এরপর মার্কেটের গেট থেকে ‘আফরোজ ম্যানশন’ সাইনবোর্ড নামিয়ে ‘মাহমুদ কমপ্লেক্স-২’ নামফলক বসিয়ে দেওয়া হয়।
সোনারা বেগম জানান, ২০১৪ ও ২০২৩ সালে বেলালের আত্মীয় হাওয়ারুন নেছা ও কয়েকজন আদালতে জমির স্বত্ব ভাটোয়ারার মামলা করেন, তবে আদালত তা খারিজ করে দেন। এরপর ২৭ মার্চ তাঁর ছেলে তাজুল ইসলাম টিপুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয়। এর পরদিন দখলচেষ্টা চালান বেলাল ও তাঁর লোকজন।
ঘটনার পর টিপু আদালতে মামলা দায়ের করেন, যাতে বেলাল আহমদ ছাড়াও মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে আবদুল মনির ও আবদুল মুমিনকে আসামি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
সংবাদ সম্মেলনে সোনারা বেগম আরও বলেন, ২৪ জুন ফের হামলার শিকার হন তাঁরা, তবে পুলিশ মামলা নেয়নি। বরং উল্টো টিপুসহ ১৫ জনের নামে পাল্টা মামলা নিয়েছে পুলিশ। তিনি বেলালের একের পর এক হুমকি ও দখল প্রচেষ্টায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বেলাল আহমদ বলেন, “এই জমি আমার নানার ক্রয় করা সম্পত্তি। তাজুলের চাচা একজন আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় এতদিন তাঁদের দখলে ছিল। আমি ৫ আগস্টের পর সেখানে অফিস করি—তখনই তারা ঝামেলা শুরু করে। অথচ এখনো জমির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।”
এই ঘটনায় সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরে উত্তেজনা ও বিভক্তি তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি দলীয় শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতির ওপর সরাসরি আঘাত।