বিডিটাইম ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে সরকারকে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা কর রাজস্ব তুলতে হবে। কর জাল বাড়িয়ে এই রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে আইএমএফকে জানানো হয়েছে।
গত সোমবার আইএমএফ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট’-এ এই অতিরিক্ত কর আহরণের শর্তসহ সরকারের নানা প্রতিশ্রুতির কথা উঠে এসেছে। আইএমএফের দেয়া মোট ৩৩টি কাঠামোগত শর্তের মধ্যে এটি অন্যতম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, রাজস্ব আহরণে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হিসেবে কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনা, কর ফাঁকি রোধ, অটোমেশন জোরদার ও করজাল সম্প্রসারণে কাজ চলছে। সরকারের প্রত্যাশা, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়তি আয় নিশ্চিত করা যাবে।
কর প্রশাসনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে আইএমএফের সুপারিশে এনবিআর বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে— প্রতি দুই–তিন বছর পরপর জনমত জরিপ চালানো, কর কর্মকর্তাদের জন্য নৈতিকতা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এবং প্রতিবছর আনুগত্যের ঘোষণা নেওয়া।
এ ছাড়া এনবিআর জানিয়েছে, প্রতি অর্থবছর শেষে ছয় মাসের মধ্যে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গৃহীত ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই একটি আচরণবিধি ও নৈতিকতা সনদ প্রণয়ন করা হবে।
সরকার এনবিআরকে দুটি আলাদা বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে— একটি রাজস্ব আহরণের জন্য এবং অন্যটি নীতিমালার জন্য। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং শিগগিরই অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হবে।
সরকার আশা করছে, ভ্যাট ও শুল্ক কাঠামোতে কিছু সংস্কার কার্যকর হলে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যাবে। এর মধ্যে কিছু পণ্যে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হয়েছে এবং আদর্শ ১৫ শতাংশ ভ্যাটহার বাস্তবায়নের আওতা বিস্তৃত করা হয়েছে।
আইএমএফের কাছে পাঠানো চিঠিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষর করে জানান, স্বল্পমেয়াদে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও দীর্ঘমেয়াদে কাঠামোগত সংস্কারই সরকারের মূল কৌশল। এর আওতায় বিদ্যুৎ, সার, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতে ভর্তুকি ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে রপ্তানি প্রণোদনা এবং ২০২৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে রেমিট্যান্স প্রণোদনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করার অঙ্গীকার করেছে সরকার।