Top 5 This Week

কাদির খানকে হত্যা করে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে চেয়েছিল ভারত-ইসরাইল

বিডিটাইম ডেস্ক

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট যাঁকে ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক বলে মনে করতেন, আর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক সাবেক প্রধান যাঁকে হত্যার সুযোগ না পাওয়াকে আফসোস করেছেন—তিনি হলেন পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির জনক ড. আব্দুল কাদির খান।

তিনি শুধু পাকিস্তানের নয়, মুসলিম বিশ্বের জন্যও এক ‘পারমাণবিক বোমা’ ধারণার প্রবক্তা। ১৯৭৪ সালে ভারতের প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার পর পাকিস্তান যখন পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন এই বৈজ্ঞানিক নায়ক হয়ে ওঠেন জাতির নির্ভরতার প্রতীক।

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে কাদির খান গোপনে একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক প্রযুক্তি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, যা ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা দেয়। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক নজরদারির কেন্দ্রে চলে আসেন, এবং পরে এই ‘পারমাণবিক বিস্তার’-এর দায় স্বীকার করে নেন একাই।

গুপ্তচরবৃত্তি, সেন্ট্রিফিউজ চুরি ও ইসরায়েলি হুমকি

নেদারল্যান্ডসে কর্মরত অবস্থায় ইউরেনকোর পারমাণবিক ব্লুপ্রিন্ট সংগ্রহ করে পাকিস্তানে ফিরে আসেন কাদির খান। পরে তাঁর বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসে গুপ্তচরবৃত্তির মামলা হয়।

ইসরায়েল একাধিকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে এবং ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এমনকি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে পরিকল্পনায় সম্মত হলেও পরে তা বাতিল করেন।

১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার জবাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষা দেশটিকে সপ্তম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করে। কাদির খান হয়ে ওঠেন জাতির নায়ক। তাঁকে নিয়ে শোভাযাত্রা বের হতো, তাঁর নামে স্কুল, রাস্তা, এমনকি ক্রিকেট দলের নামকরণ হতো। একদিন তিনি নিজেই টিভিতে বলেছিলেন, ‘কে পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছে? আমিই করেছি।’

গোপন পারমাণবিক প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে যখন ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা ছড়ায়, কাদির খান তখন দায় নেন একাই, বলেন, রাষ্ট্রের কোনো হাত ছিল না। পাকিস্তান সরকার তাঁকে ক্ষমা করে দেয় এবং পরে গৃহবন্দি করে রাখে।
২০০৩ সালে লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফি তাঁর কাছ থেকে নেওয়া পারমাণবিক প্রযুক্তির বিষয়টি ফাঁস করে দেন। এরপর সিআইএ একাধিক নথিপত্র ও যন্ত্রাংশ জব্দ করে।

২০২১ সালে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ইমরান খান তাঁকে ‘জাতীয় আইকন’ বলে আখ্যা দেন।

মৃত্যুর আগে কাদির খান বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, কেউ এর দিকে কুনজর দিতে পারবে না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish