Top 5 This Week

গরমে জীবনযাত্রা: তীব্র তাপদাহে নগরজীবন ও করণীয়

ফেরদৌস ইসলাম

চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরুতেই সূর্য যেন তার সব রোষে জ্বলতে থাকে। এই রোদ, এই তাপদাহ—প্রতিদিনকার জীবনের ওপর কী নির্মমভাবে ভর করে, তা নগরবাসীই সবচেয়ে ভালো জানে। শহরের আকাশে নেই একটুকরো মেঘ, গাছের ছায়া হারিয়ে গেছে কংক্রিটের আড়ালে। চারদিকে শুধু উত্তাপ, ক্লান্তি আর অবসাদ।

ঢাকার রাস্তায় বেরোলে চোখে পড়ে ঘামে ভেজা মুখ, হাঁপাতে হাঁপাতে বাস ধরতে দৌড়ানো মানুষ, রিকশাচালকের পিঠ ঘামে ভিজে স্যাঁতসেঁতে, সিগন্যালের লাল আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের ভেতর দমবন্ধ পরিবেশ। অফিসগামী কর্মজীবীদের ধকল তো আছেই, সবচেয়ে কষ্টে থাকে খোলা মাঠে, রাস্তায় বা নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমজীবীরা। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘরে ঘোরাফেরা করলেও থেমে থাকে না তাদের কাজ। কষ্টও কমে না।

তীব্র গরম শুধু অস্বস্তির নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিরও বড় কারণ। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক, মাথাব্যথা, বমি বা ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া—এসব সমস্যা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। চিকিৎসকরা বারবার বলছেন—গরমে সতর্ক থাকা জরুরি। কিন্তু সেই ‘সতর্ক থাকা’টা সবার পক্ষে কি সম্ভব? রিকশাচালক কি প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করতে পারেন? ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিওয়ালা কি দুপুরের রোদে বিশ্রাম নিতে পারেন?

নগরের অতিরিক্ত গরমের পেছনে রয়েছে পরিবেশগত ভারসাম্যের অভাব। প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় এখন গড়ে উঠেছে দালান। গাছ কমেছে, পুকুর-মাঠ হারিয়ে গেছে। একসময় যেখানে ছায়ায় বসে জলপাই খাওয়া যেত, এখন সেখানে কেবল ধুলা আর পাথরের রাজত্ব। শহর নিজেই যেন এক বিশাল উত্তপ্ত চুলায় পরিণত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সমাধান দরকার দুই স্তরে—ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক। ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হতে হবে: হালকা সুতির পোশাক পরা, পর্যাপ্ত পানি পান, রোদ এড়িয়ে চলা—এই সাধারণ অভ্যাসগুলো আমাদের রক্ষা করতে পারে। কিন্তু বড় সমাধান আসবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায়। নগরে সবুজায়ন, ছাদবাগান, জলাধার সংরক্ষণ, রাস্তার পাশে ছায়া সৃষ্টি এবং খোলা জায়গায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা—এসব ছাড়া শহরের গরম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

তাপমাত্রা বাড়ছেই। গরম থাকবে—তবে জীবনকে সেই গরমের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে দরকার সচেতনতা, উদ্যোগ এবং কিছুটা সহানুভূতি। গরমের দায় শুধু প্রকৃতির ওপর চাপিয়ে না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের আচরণে সামান্য পরিবর্তন আনতে পারি—তবেই হয়তো শহরের বাতাসে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish