বিডিটাইম ডেস্ক
চরম দুর্ভিক্ষের মুখে অবরুদ্ধ গাজা। চারদিকে শুধুই খাবারের জন্য হাহাকার। গুলি, বোমা কিংবা বিমান হামলার প্রয়োজন নেই—ইসরাইলের ত্রাণ অবরোধ অব্যাহত থাকলে না খেয়ে মরবে গাজাবাসী। দিনে দিনে ‘যমদূত’ হয়ে উঠছে কৃত্রিম খাদ্যসংকট, যা গাজার ২১ লাখ বাসিন্দাকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে।
১২ মে প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ত্রাণ সহায়তা অবরোধ চলতে থাকলে ১১ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো গাজা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। বর্তমানে গাজার মানুষদের মধ্যে অনেকে একবেলা-আধপেটা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন, কেউ আবার একেবারেই খাবার পাচ্ছেন না। আড়াই মাসের বেশি সময় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেখানে প্রতি পাঁচজনের একজন অনাহারে রয়েছেন। এছাড়াও পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ৭১ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
আইপিসি জানায়, বর্তমানে গাজার ২ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ভয়াবহ খাদ্যসংকটে রয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে ১০ মে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গাজার ৯৩ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে (আইপিসি পর্যায় ৩) রয়েছে, ১২ শতাংশ রয়েছে বিপর্যয়ের (পর্যায় ৫) মধ্যে এবং ৪৪ শতাংশ মানুষ জরুরি অবস্থায় (পর্যায় ৪) রয়েছে। এই সংকটকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকট হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
গাজার খাদ্য ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও) বলেছে—যুদ্ধের কারণে ৭৫ শতাংশ আবাদি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে, ১,৫০০টির বেশি কৃষি সেচ কূপ অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলে গমের আটার দাম বেড়েছে ৩,০০০ শতাংশ। ইউনিসেফের তথ্যমতে, ৮৫ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘‘গাজার অধিকাংশ শিশু এখন চরম ক্ষুধার সম্মুখীন— বিষয়টি তাকে বিমর্ষ করে তুলেছে।’’
এদিকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর আন্তোইন রেনার্ড হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের জরুরি খাদ্য মজুত শেষ হয়ে গেছে। অপুষ্টির হার বাড়ছে, যা শরীরকে দুর্বল করে রোগে আক্রান্ত করছে।’’
ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড ১৫ মে জানিয়েছে, ইসরাইলের বাধায় গাজায় খাবার, ওষুধ এমনকি নবজাতকের জন্য ইনকিউবেটর পর্যন্ত প্রবেশ করানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ইসরাইল অবশ্য দাবি করেছে, গাজায় খাদ্যের ঘাটতি নেই, বরং সমস্যার মূল কারণ হামাসের লুটপাট।
বিপরীতে, মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে আবুধাবিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘গাজার বহু মানুষ ক্ষুধার্ত’’— এবং আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে ভালো কিছু ঘটবে।’’
গাজার মানবিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিলের কর্মকর্তা সালমা আলতাওয়েল বলেন, ‘‘মানুষের চোখে এখন কেবলই পানি। তারা জানে না শিশু বা বয়স্কদের নিয়ে কোথায় যাবে। চলাফেরার শক্তি নেই। তারা কেবল খুব ক্ষুধার্ত।’’
আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা গাজায় এখন মৃত।’’
কানাডিয়ান নার্স অ্যামি লো জানান, ‘‘খাদ্যের দাম হাস্যকর, ওষুধ সীমিত। এক মাসের ওষুধও দেওয়া যাচ্ছে না।’’
কারও ভাগ্যে জুটছে না একবেলা খাবারও। কেউ কেউ পশুখাদ্য পিষে রুটি তৈরি করছেন, যা স্বাদে তিক্ত, গন্ধে গা গুলানো—তবুও তা খেয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার মানুষ।
ছয় বছরের ইসমাইল খাবার আনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছে। ছোট্ট কণ্ঠে বলেছে, ‘‘খাবার আনতে গিয়েছিলাম কিন্তু পাইনি।’’
এই বাস্তবতায় দাতব্য সংস্থা রোড টু রিকাভারির প্রধান ইয়েল নয় বলেন, ‘‘আমার করের টাকায় শিশু হত্যা করা হচ্ছে। বিশ্বের কাছে অনুরোধ—দয়া করে এই যুদ্ধ থামান।’’