বিডিটাইম ডেস্ক
সরকারের নির্দেশ অমান্য করে নির্ধারিত দিনে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) মো. জাকির হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি উচ্চপদস্থ সূত্র।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর আওতাধীন কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন ২১ ও ২৮ জুন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন, যদিও এর আগে ১৮ জুন এনবিআরের এক আদেশে ২৮ জুনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশ অমান্য করে তিনি কর্মস্থলে না গিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়েছেন। ফলে সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৮-এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরখাস্তের সিদ্ধান্ত শুধু একজনকে ঘিরে নয়—সরকার আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতিতে জড়িতদের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে এবং দুদককে পৃথকভাবে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এসব কর্মকর্তা যাতে দেশত্যাগ না করতে পারেন, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জাকির হোসেনকে ঘিরে সমালোচনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গত ২৯ জুন শনিবারের একটি ঘটনা। ওই দিন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে তিনি নিজেই ঢাকায় এনবিআরের চলমান আন্দোলনে অংশ নেন এবং কাস্টমস হাউসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সেখানে পাঠান। ১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি, কিন্তু এই প্রথমবার তা বন্ধ হয় তাঁর সিদ্ধান্তে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস অফিস, যেখানে দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৩,০০০–৪,৫০০ কনটেইনার আমদানি এবং ২,০০০–৩,০০০ কনটেইনার রপ্তানি হয়। অর্থমূল্যে এটি প্রতিদিন ১,৫০০–২,০০০ কোটি টাকার পণ্যচলাচলের কেন্দ্র। এই হাউস থেকেই সরকার প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন একটি প্রতিষ্ঠানে একক সিদ্ধান্তে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া শুধু প্রশাসনিক শৃঙ্খলার লঙ্ঘন নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেও মারাত্মক আঘাত।
উল্লেখ্য, এনবিআর সংস্কারের দাবিতে দুই মাস ধরে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ও শাটডাউনের মতো কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল কিছু কর্মকর্তা। যদিও সরকার শেষ পর্যন্ত কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এখন ওই আন্দোলনে সক্রিয় ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর সরকার।