Top 5 This Week

চামড়াশিল্পে খেলাপি ঋণের হার ৩৮ শতাংশ

বিডিটাইম ডেস্ক

চামড়াশিল্প খাতে ব্যাংক ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাতে ব্যাংক ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকায়, যার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৮ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় চামড়া খাতে নতুন ঋণ দিতে আগ্রহ হারিয়েছে ব্যাংকগুলো। ২০২৪ সালে ৯টি ব্যাংক ঈদুল আজহায় চামড়া ক্রয়ের জন্য ২৩২ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিলেও বিতরণ হয়েছে মাত্র ১২৫ কোটি টাকা। অথচ আগের বছর (২০২৩) এই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ২৭০ কোটি, ২০২২ সালে ৪৪৩ কোটি, ২০২১ সালে ৬১০ কোটি, ২০২০ সালে ৭৩৫ কোটি এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খাতে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে পুনঃতফশিল করা ঋণের অনাদায়ী অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকায়। ব্যাংকারদের মতে, অনেক ব্যবসায়ী ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধে অনীহা দেখান। এমনকি মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েও পুনঃতফশিলের সুযোগ থাকলেও অনেকে তা নিতে চান না। ফলে ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে এবং নতুন ঋণ বিতরণে নিরুৎসাহিত হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “চামড়া খাতে এ বছর ২৩২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল, কিন্তু কতটা ঋণ ছাড় হয়েছে তা ব্যাংক খোলার আগে বলা যাচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী ঋণ ফেরত দিতে চান না, এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যদি কেউ ঋণ নেয় আর ফেরত না দেয়, তাহলে তাদের আবার ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়।”

চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত অর্থায়ন না থাকায় কোরবানির সময় চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতে জটিলতা দেখা দেয়। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, “ঈদের সময় দ্রুত নগদ অর্থ দরকার হয়। এ বছর আমাদের চাহিদা ছিল ৩০০–৩৫০ কোটি টাকা, কিন্তু পাওয়া গেছে মাত্র ১২৫ কোটি। পর্যাপ্ত অর্থ থাকলে চামড়া নষ্ট রোধ করা যেত, গরিব-মিসকিনরাও চামড়া বিক্রি করে নগদ অর্থ পেতেন।”

বিটিএ’র তথ্যমতে, সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮০০। দেশে রয়েছে ১ হাজার ৮৬৬টি বড় ও মাঝারি আড়ত। ঈদ মৌসুমে আরও অসংখ্য মৌসুমি আড়ত তৈরি হয়। ব্যবসায়ী আজম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “ব্যাংকগুলো শুধু ট্যানারি মালিকদের ঋণ দেয়, কিন্তু যারা সরাসরি কাঁচা চামড়া সংগ্রহে জড়িত, তারা ঋণ পান না। এতে মাঠপর্যায়ে সংকট তৈরি হয়।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চামড়া সংরক্ষণের জন্য এবারের ঈদে এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করেছে সরকার।

ব্যাংকারদের বক্তব্যে জানা যায়, ঋণের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নে আগ্রহী না হওয়ায় তা বিতরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনাগ্রহ বাড়ছে।

চামড়ার দাম নির্ধারণেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০–৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা। খাসির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২২–২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০–২২ টাকা। সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা।

চামড়াশিল্প জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়—সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। গত অর্থবছরে এই খাত থেকে বৈদেশিক আয় হয়েছে প্রায় ১.১৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ ঋণসংকট, ব্যবস্থাপনা জটিলতা এবং খেলাপি প্রবণতা এই সম্ভাবনাময় খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles

en_USEnglish